অভিষেক ডার্বিতেই জোড়া গোলে জয়। 'কৃষ্ণ প্রেম' ও মনবীরে মজে মোহনবাগান। বিস্তারিত পড়ুন...

এটিকে মোহনবাগান : ২ (রয় কৃষ্ণা, মনবীর সিং)
এসসি ইস্টবেঙ্গল : ০
সব্যসাচী বাগচী : ৯০ মিনিটের যুদ্ধে পাল্লা দিয়ে লড়লেও পারলেন না রবি ফাউলার ও তাঁর এসসি ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধ দাপট দেখালেও, দ্বিতীয়ার্ধে জ্বলে উঠল আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের এটিকে মোহনবাগান। রয় কৃষ্ণা ও মনবীর সিংয়ের দুরন্ত গোলের সৌজন্যে মর্যাদার ডার্বি ২-০ গোলে জিতল সবুজ-মেরুন বাহিনী। তবে শুধু দেবজিত মজুমদার নন। একইসঙ্গে এই হারের জন্য লাল-হলুদের দুর্বল ডিফেন্স'ও সমানভাবে দায়ী। আর তাই তো আইএসএলের মঞ্চে অভিষেক ডার্বি জিতে ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট উঠে এল প্রীতম কোটালের দল।
এটাই আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। শুরুতে প্রতিপক্ষকে বুঝে নেওয়া। এবং তারপর প্রতি আক্রমণের ঝড় তুলে লাগাতার গোল দেগে বিপক্ষকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া। শুক্রবারের ডার্বি যুদ্ধেও যেন সেই কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যাচে প্রতিফলন ঘটল। প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ হলে কি হবে, ৬৪ মিনিটে ডেভিড উইলিয়ামসের বদলে তরুণ মনবীর সিং'কে নামিয়ে চমকে দিলেন দুবারের আইএসএল জয়ী স্প্যানিশ কোচ।
অবশ্য পঞ্জাব তনয়ের মাঠে নামার আগেই বিপক্ষের জালে বল ঢুকিয়ে দেন রয় কৃষ্ণা। পুরো ম্যাচ ফিট না হলেও তিনি ভীষণ সুযোগ সন্ধানী। সেটা কিবুর দলের বিরুদ্ধে গোলের পর এদিন আবার প্রমাণ করে দিলেন। দেবজিতের ক্ষনিকের ভুলে ৪৯ মিনিটে তাঁর বাঁ পায়ের শটে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধেও বাঁ পায়ের শটে গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন তিনি। এই ম্যাচেও গোলের জন্য তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল দল। আর তিনি সেই দায়িত্ব পালন করলেন দারুণভাবে।
সেই গোলের পর থেকেই কেমন যেন গুটিয়ে গেল লাল-হলুদের ডিফেন্স। বলবন্ত সিং চেষ্টা করলেও, কেন তাঁর পরিবর্ত হিসেবে মহম্মদ রফিক'কে ফাউলার মাঠে নামলেন, সেটা হয়তো তিনিই বলতে পারবেন। তবে ৮২ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়েছিল লাল-হলুদ। যদিও অসাধারণ সেভ করলেন গোলরক্ষক অরিন্দম। পিলকিংটনের ডান পায়ের জোরালো শট শরীর ছুড়ে আটকালেন তিনি। কর্নার হয়ে গেল বল। এককথায় বিশ্বমানের সেভ।
আর তারপরেই এল সবুজ-মেরুনের ঝুলিতে জয়সূচক গোল। ৮৫ মিনিটে ডান দিক দিয়ে উঠে এসে বিশ্বমানের গোল করলেন তরুণ মনবীর সিংহ। ডার্বিতে এই গোল অসাধারণ। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে এসে কাট করে বাঁ পায়ের শটে জালে বল জড়ালেন তিনি। ২-০ এগিয়ে গেল মোহনবাগান। এবং সেই গোলের সৌজন্যে প্রথম ডার্বি ম্যাচে কোচ হিসেবে জয় পেলেন হাবাস।
গত মরসুমে আই লিগ ডার্বি যুদ্ধে শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। তারপর ঠিক ৩১২ দিনের মাথায় আবার ৯০ মিনিটের যুদ্ধে সম্মুখ সমরে ভারতীয় ফুটবলের দুই পাওয়ার হাউস। তবে এবার মঞ্চ একেবারে আলাদা। আইএসএলের মঞ্চে প্রথমবার ডার্বি বলে কথা। উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে হাবাস ও ফাউলার, দুই কোচ সাইড লাইনের ধারে বারংবার মেজাজ হারালেন। ভার্চুয়াল দর্শক হিসেবে দুটো দলের ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করলেন ভাইচুং ভুটিয়া-হোসে রামিরেজ ব্যারেটোকেও। কিন্তু তাতে কি! প্রথমার্ধে যে গোলের দেখা নেই।
ভারতীয় ফুটবলের দুই কিংবদন্তি প্রদীপ ব্যানার্জি ও চুনী গোস্বামী'কে স্মরণ করে শুরু হল হাই প্রোফাইল ডার্বি। বঙ্গ ফুটবল সমাজের আবেগের 'বড় ম্যাচ' দিয়ে এবারের আইএসএল অভিযান শুরু করল লাল-হলুদ বাহিনী। এবং ম্যাচের শুরুতেই ৭ মিনিটে গোল করে ফেলতে পারতেন অ্যান্টনি পিলকিংটন। জ্যাক মাঘোমা'র থ্রু থেকে। সবুজ-মেরুনের মাঝমাঠ অনেক শক্তিশালী হলেও বারবার বল দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জ্যাক মাঘোমা। ১৯ মিনিটে আবার হাবাসের ডিফেন্স ভাঙার চেষ্টা করেন পিলকিংটন। এবার তাঁর শট আটকে দিলেন অরিন্দম। তবে প্রবীর দাস কিন্তু ডানদিকের উইং থেকে একাধিকবার আক্রমণ চালাচ্ছিলেন। ৩৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন জাভি হার্নান্দেজ। তবে অসাধারণ প্রচেষ্টায় দুরন্ত সেভ করলেন দেবজিত।
তবে দেবজিতের সেই প্রচেষ্টা কাজে লাগেনি। কারণ, তাঁর বিপক্ষে রয় কৃষ্ণা ও মনবীর সিং গোল করে মোহনবাগানকে জয় এনে দিলেও, বিপক্ষে আরও একজন ছিলেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয় আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।
এসসি ইস্টবেঙ্গল : দেবজিত মজুমদার (গোলকিপার), স্কট নেভিল, রানা ঘরামী/অভিষেক আম্বেকর, ড্যানিয়েল ফক্স (অধিনায়ক), নারায়ণ দাস, মাত্তি স্টেইনমান, লোকেন মেতেই/ আঙ্গুসানা, সুরচন্দ্র সিং, অ্যান্টনি পিলকিংটন, জ্যাক মাঘোমা, বলবন্ত সিং/মহম্মদ রফিক
এটিকে মোহনবাগান : অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোলকিপার), প্রীতম কোটাল (অধিনায়ক), তিরি, সন্দেশ সন্দেশ জিঙ্গান, প্রবীর দাস, শুভাশিস বোস, জাভি হার্নান্দেজ, কার্ল ম্যাকহাউ, জয়েস রানে/প্রণয় হালদার, রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস/ মনবীর সিং