দুর্ভাগ্য! পাঁচটি সেরা দল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার যোগ্য দাবিদার হয়েও জিততে পারেনি

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : চলতি ইউরো ২০২০ তে এমন অনেক দেশই রয়েছে, যারা এবারের খেতাব জয়ের দাবিদার। কিন্তু দাবিদার হলেই হয় না, চুড়ান্ত ম্যাচ অবধি জেতার খিদেটা থাকতে হয়। অনেক বারই এমন হয়েছে, শক্তিশালী দল থাকা সত্ত্বেও খেতাব জয় হয়নি। এরকমই আমরা পাঁচটি এমন সেরা দল দেখব, যারা সেই সময় ইউরো জেতার দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও জিততে পারেনি।
১. ইংল্যান্ড (১৯৯৬)
১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর কখনই আন্তর্জাতিক খেতাব জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল ছিল তাদের সেরা পারফর্মেন্স। কিন্তু তারও আগে ১৯৯৬ সালে ঘরের মাঠে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার মোক্ষম সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের কাছে।
টোনি অ্যাডামসের নেতৃত্বে সেই দলে ছিলেন পল গাসকোয়েন, টেডি শেরিংহ্যাম ও অ্যালান শিয়ারারের মত সুপারস্টাররা। এছাড়া তখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে সদ্য উত্তরণ করা গ্যারি নেভিল, সোল ক্যাম্পবেল ও রবি ফাউলার ছিলেন এই দলে। টেরি ভেনাবেলসের সেই দল প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে ড্র করলেও স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পেয়ে পরের রাউন্ডে ওঠে। এরপর কোয়ার্টারে পেনাল্টিতে স্পেনের বিরুদ্ধে জিতে সেমি ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। কিন্ত বর্তমান ইংল্যান্ড দলের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের পেনাল্টি মিসে জার্মানির কাছে হেরে ছিটকে যায় ইংল্যান্ড।
২. পর্তুগাল (২০০৪)
নিঃসন্দেহে সেই বছরটি কার্যত অঘটনের জেরে খেতাবটি তুলতে পারেনি পর্তুগাল। গ্রুপ লিগের প্রথম ম্যাচে গ্রিসের কাছে হার, আর ফাইনালেও গ্রিসের কাছে হেরেছিল এই পর্তুগিজ দল। কিন্তু অসাধারণ একটি দল ছিল তাদের। ২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ লুই স্কোলারি দায়িত্ব নিয়েছিলেন পর্তুগালের। সেই দলে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন লুই ফিগো ও রুই কোস্তা। দলে নয়া মুখ হিসেবে এসেছিলেন ১৯ বছরের তরুণ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
গ্রুপ পর্বে রাশিয়া ও স্পেনকে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল পর্তুগাল। এরপর ভ্যান নিস্টেলরুয়ের নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ফাইনালে উঠেছিল পর্তুগাল। কিন্তু অখ্যাত এক গ্রিস টিম অঘটন ঘটিয়ে ইউরো খেতাব ছিনিয়ে নেয় পর্তুগালের হাতের ডগা থেকে।
৩. নেদারল্যান্ড (১৯৭৬)
বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের সব থেকে অভাগা দলের কথা বললে ৭০ দশকের নেদারল্যান্ডের কথা অবশ্যই বলা দরকার। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে হার হজম করেছিল, আর তার মাঝে ছিল ১৯৭৬ ইউরো। ২৯ বছরের জোহান ক্রুইফের নেতৃত্বে সেই ডাচ দল টোটাল ফুটবলের ধারাকে নিয়ে এসেছিল।
কিন্তু সেমি ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়ার কাছে হেরে যায় নেদারল্যান্ডস। সেই চেক দলই ইউরো জিতে আসে। যদিও যুগোস্লাভিয়াকে হারিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল নেদারল্যান্ডস, কিন্তু সেই টুর্নামেন্ট জয়ের প্রবলতম দাবিদার ছিলেন ক্রুইফরা।
৪. ইতালি (২০০০)
২০০০ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্ধর্ষ একটি দল নিয়ে এসেছিল ইতালি। অসাধারণ ডিফেন্স যা সমৃদ্ধ করেছিলেন ফাবিও কানাভারো, আলেসান্দ্রো নেস্তা, পাওলো মালদিনি ও জিয়ানলুকা জামব্রোতা। এছাড়া ফিলিপো ইনঝাঘি, আলেসান্দ্রো ডেল পিয়েরো ও তরুণ ফ্র্যান্সেসকো টোট্টিও ছিলেন সেই দলে।
ফাইনালের আগে অবধি গোটা টুর্নামেন্টে মাত্র দুই গোল খেয়েছিল ইতালি। তুরস্ক, সুইডেন ও বেলজিয়ামকে গ্রুপ পর্বে হারানোর পর রোমানিয়া ও নেদারল্যান্ডকে নকআউটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ইতালি। কিন্তু এক্সট্রা টাইমে গড়ানো খেলায় দাভিদ ত্রেজেগুয়ের গোলে খেতাব হাতছাড়া করে ইতালি।
৫. ফ্রান্স (২০১৬)
নিঃসন্দেহে সেই বছর সব থেকে সাজানো গোছানো দল ছিল ফ্রান্সের। পোগবা, গ্রিজম্যান, জিরুড সমৃদ্ধ এই দলটি নিজেদের ঘরের মাঠে ইউরো জেতার প্রবল দাবিদার ছিল। কিন্তু ফাইনালে রোনাল্ডোহীন পর্তুগালের কাছে হারে যেন যাবতীয় স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল।
গ্রুপ পর্বে রোমানিয়া ও আলবেনিয়াকে হারিয়েছিল ফ্রান্স, এরপর শেষ ১৬ এ আয়ারল্যান্ড ও কোয়ার্টার ফাইনালে আইসল্যান্ডকে হারিয়ে অনায়াসে সেমি ফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স। এরপর জার্মানিকে হারিয়ে ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করেছিল ফরাসি বাহিনী। কিন্তু পর্তুগালের কাছে এক গোলে হেরে ঘরের মাঠে জেতার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল ফ্রান্সের।