রেড রোডের তীর্থক্ষেত্র ছেড়ে, নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে 'তীর্থ'!

'হতাশার পরিণতি সবসময়ই নেতিবাচক। হতাশা মানুষের জীবনে শুধু কষ্টই ডেকে আনে,সাফল্য নয়।' মহামেডান থেকে ব্রাত্য বা একপ্রকার বাদ পড়ে হতাশ কিনা জানতে চাওয়া হলে, ক্ষনিকের জন্য যেন দার্শনিক একদা মহামেডানের মাঝ মাঠের প্রাণ ভোমরা তীর্থঙ্কর। তবে, আক্ষেপ যে একেবারেই নেই,তা নয়। বরং তার প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বলে কিছুটা হলেও মনঃক্ষুণ্ণ! জানালেন আগামীর গন্তব্য!
তবে মাঠেই জবাব দিতে বদ্ধপরিকর তীর্থঙ্কর সরকার অকপট এক্সট্রাটাইম বাংলা'য়। শুনলেন- মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রশ্নঃ তাহলে অবশেষে মহামেডান অতীতই হয়ে গেলো জীবনে?
উত্তরঃ ফুটবলারদের জীবনে অতীত বর্তমান বলে কিছু নেই। আজ যে বর্তমান, কাল সে অতীত বটে।কিন্তু আগামী কালই হয়তো দেখবেন সে-ই আবার বর্তমান। এককথায় ফুটবলারদের জীবন একটা গোলাকার চক্র।আগে থেকে বোঝা যায় না কোথায় গিয়ে থামবে!
প্রশ্নঃ কিন্তু, এটা তো মানতেই হবে, আপাতত অতীত?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তা বটে।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, ভেবেছিলে হঠাতই ব্রাত্য হয়ে যাবে?
উত্তরঃ সত্যিই এটা ভাবিনি।পারফরম্যান্স এতটাও খারাপ ছিল না যে,৩০ জনের স্কোয়াডেই থাকবো না।
প্রশ্নঃ তোমাকে নিয়ে সবচেয়ে যে কথাটি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে,তা হল- 'তীর্থ ৯০ মিনিটের খেলোয়াড় নয়'! এই বিষয়ে তোমার অভিমত কি?
উত্তরঃ আমার শরীরের কন্ডিশন নিশ্চয়ই আমার চেয়ে ভালো কেউ জানবে না! কিন্তু, আমি নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি।
প্রশ্নঃ উত্তর কি পেলে?
উত্তরঃ উত্তর পাইনি। তবে, একটা মিল খুঁজে পেয়েছি।
প্রশ্নঃ কি?
উত্তরঃ এই একই কথা মোহনবাগানে থাকাকালীনও একবার শুনেছিলাম। আসলে জনৈক কোচ (পড়ুন শঙ্করলাল) আমার গায়ে, '৯০ মিনিটের প্লেয়ার নয়' ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ তাহলে তুমি ৯০ মিনিট ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করার ক্ষমতা রাখো বলছো?
উত্তরঃ বলছি না, করে দেখিয়েছি। মোহনবাগানে এই কথা শুনে মহামেডানে সই করলাম। তখন মহামেডান কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য। এবং জানেনই তো বাবলু (সুব্রত) দা ফিটনেস নিয়ে কতটা খু্ঁতখুতে! সেই বাবলু দা'র সময়ই প্রায় সব ম্যাচ ৯০ মিনিট খেললাম। কোচ হাভিয়াও আমাকে আনফিট মনে করেছিলেন,কিন্তু এবারের আইএফএ শিল্ড কোয়ার্টার ফাইনালে গোকুলামের বিরুদ্ধে প্রমান করে দিয়েছিলাম এবং কোচ স্বীকারও করেন তার বুঝতে ভুল হয়েছে। আসলে মানুষকে বাইরে থেকে বিচার করা যায় না।
প্রশ্নঃ 'ডোন্ট জাজ্ এ বুক,বাই ইটস্ কভার' এই প্রবাদ তোমার সাথে যায় বলছো?
উত্তরঃ একশো শতাংশ। আপনাকে ছোট্ট একটা উদাহরন দিই। ট্রাউ ম্যাচ মহামেডান ০-২ গোলে হারছিলো। ওই ম্যাচে ফুল টাইম মাঠে ছিলাম। ম্যাচটা আমার দুটো অ্যাসিস্টে সমতা ফিরিয়ে ড্র করি। মজার ব্যাপার হলো, আমার সেকেন্ড অ্যাসিস্ট ছিল ৮৫ মিনিটে। যেখানে একটা আনফিট খেলোয়াড় শরীরটাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় থাকে।আসলে এগুলো তো আর পরিসংখ্যানে লেখা থাকে না!
প্রশ্নঃ কিন্তু পরিসংখ্যানও বলছে তোমার পারফরম্যান্স খারাপ নয়!
উত্তরঃ হ্যাঁ, মাত্র ৩৮০ মিনিট খেলে ৪ অ্যাসিস্টে তৃতীয় স্থানে আমি। সর্বোপরি, যখন মাঠে নেমেছি,তখন হার সময়ের অপেক্ষা। স্ট্রাইকারদের মধ্যেও আর গোলের খিদে তখন পরিলক্ষিত হত না।
প্রশ্নঃ পরবর্তী গন্তব্য?
উত্তরঃ কলকাতা লিগের বেশ কয়েকটা ক্লাবের অফার আছে।
প্রশ্নঃ নাম গুলো জানতে পারি?
উত্তরঃ বিএসএস, সাদার্ন, পিয়ারলেস…..।
প্রশ্নঃ আই লিগ বা আইএসএলের অফার পাওনি?
উত্তরঃ আই লিগের বেশ কয়েকটা ক্লাবের অফার আছে।কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে চাইছে। তাই দোটানায় আছি।
প্রশ্নঃ গতবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলে ইস্টবেঙ্গলের অফার পেয়েছিলে শুনলাম। গেলে না কেন?
উত্তরঃ ওই ম্যাচের পরে বেশ কয়েকটা ক্লাবের অফার পাই,কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মহামেডানকে আই লিগে না তুলতে পারলে কোথাও যাবো না।
প্রশ্নঃ সেই মহামেডানই তো ছেঁটে ফেললো। দুঃখ হয় না?
উত্তরঃ আসলে এটাই নিয়তি। ফুটবলারদের জীবন যাযাবরের মতো। আজ এখানে তো কাল ওখানে। তবে, সমর্থকদের কথা ভেবে মহামেডানে আরো কয়েকটা বছর খেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই যে, নিয়তি!
প্রশ্নঃ আচ্ছা, 'কলকাতার মেসি' বিশেষণটা কেমন লাগে? তুমি নিজেকে কার সাথে তুলনা করতে চাও?
উত্তরঃ এর জন্য সমর্থকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এমন একটা জীবন্ত কিংবদন্তীর সাথে আমাকে তুলনা করার জন্য। তবে, আমি নিজেকে কারো সাথে তুলনা করিনা। বরং আমি আমার মতোই। আমি নিজেই মেসির ফ্যান। ওর জন্যই ২৫ নম্বর জার্সি ছেড়ে ১০ নম্বর পরা।
প্রশ্নঃ আচ্ছা তুমি কি নোংরা রাজনীতির স্বীকার? যার জন্য বাদ পড়তে হলো?
উত্তরঃ সেটা বলতে পারবো না। তবে, আমার সাথে চুক্তি নবীকরণ হয়নি মানে,মনে করবো পারফরম্যান্স খারাপ মনে হয়েছে হয়তো ওনাদের।
তবে, সেটা মাঠেই পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমি মাঠে নেমে পারফর্ম করতে পারলে, আশা করি সব সংশয় দূর হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ এখন তো খেলা বন্ধ, কি করছো?
উত্তরঃ আড়িয়াদহ প্রাকটিস গ্রাউন্ডে অনুশীলন করছি আর অবসরে মেয়ের সাথে খুনসুঁটি।
প্রশ্নঃ চিরাচরিত সাদা কালো জার্সি ছেড়ে,অন্য জার্সিতে মহামেডানের বিরুদ্ধে খেলতে নামছো, পরিস্থিতিটাকে কিভাবে আয়ত্ব করবে?
উত্তরঃ অন্য পাঁচটা ম্যাচের মতোই খেলবো। তবে, ম্যাচ শেষে দর্শকদের(যদি পরে অনুমতি পাওয়া যায় দর্শক প্রবেশের) সাথে হাত মেলাবো।
কারন ওরাই আমার প্রকৃত পরিবারের লোক। এখনো আমাকে সমর্থন করে চলেছে। সব হারিয়েও,এটাই পাওনা।(এবারে একটা দীর্ঘশ্বাস।)
প্রশ্নঃ ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
উত্তরঃ আমি তো ফুটবলের বাইরে কিছুই ভাবিনা, ভাবতে চাইও না। তাই, লক্ষ্য নিজেকে আরো শক্তিশালী করে ফিরে আসা। কারন জওয়াবটা তো মাঠেই দিতে হবে…….!