ফিফা র্যাঙ্কিং একটি সংখ্যা মাত্র

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ ফিফা র্যাঙ্কিং একটি সংখ্যা মাত্র, কথাটি যেন এখন প্রবাদ হয়ে উঠেছে। সদ্য এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে জর্ডান। কাতারের বিরুদ্ধে প্রথমবার ফাইনাল খেলবে তাঁরা। তবে এই জর্ডান এবং কাতারই ২০১৮ সালে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে ছিল ভারতের থেকে। ২০১৮ সালের ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ছিল ৯৭তম স্থানে। আর সেই সময়ই কাতার ছিল ৯৮তম স্থানে, আর জর্ডান ছিল একেবারে ১১০তম স্থানে। বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়েও ভারতকে অনেকটা পিছনে ফেলে এসেছে তারা। যেখানে কাতার আজ ৫৮তম স্থানে ও জর্ডান ৮৭তম স্থানে রয়েছে, সেখানে ভারত পিছিয়ে গিয়েছে ১০২তম স্থানে।
তবের খেলার মানের নিরিখে একথা বলাই যায় কাতার-জর্ডানের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আমার আপনার প্রিয় দেশের ফুটবল দল। তবে দেশে কি ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই? নাকি আমাদের দেশ আর্থিক সংকটে ভুগছে? আমদের ঘুম কি ভাঙে বোমা-গুলির তীব্র আওয়াজে?
আরও পড়ুন-২০১৮ সালে ভারতের থেকে পিছিয়ে থাকা দুই দেশ খেলছে এশিয়ান কাপের ফাইনাল!
উত্তরটা না-ই হবে। তবুও কেনো পিছিয়ে আমরা? শেষ কিছু বছরে দেশের ফুটবল ইনফ্রা স্ট্রাকচারের উন্নতি হয়েছে অনেকটাই। আইএসএল আসার পর বিশ্বের নামী-দামী কোচ-ফুটবলাররা এসেছেন। ফলে দেশীয় ফুটবলারদের খেলার ধরণ ও মানসিকতায়ও এসেছে পরিবর্তন।
আরও পড়ুন- কলকাতা হকি লীগে কোন কোন দলের বিরুদ্ধে খেলবে মোহনবাগান? বিস্তারিত জানুন
তাহলে সমস্যা কোথায়? সম্প্রতি ভারতীয় কোচ ইগর স্টিম্যাচের বেতনসংখ্যা সামনে আসে। দুই কোটি টাকারও বেশি তাঁর জন্য ব্যয় করেছে এআইএফএফ। আর তাতেই শোরগোল পড়ে যায়। ভালো মানের বিদেশি কোচ আনতে গেলে খরচ করতেই হবে ফুটবল ফেডারেশনকে। সেখানে দুই কোটি শুনেই আঁতকে উঠছেন মানুষ!
যদিও স্টিমাচ আসায় ভারত বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলেও বিশ্বকাপ খেলার আর জেতার স্বপ্ন কবে দেখবেন ভারতবাসী?
আরও পড়ুন- Ole Gunnar Solskjaer: প্রথমবার ভারতে মাটিতে রোনাল্ডোর প্রাক্তন কোচ
চলতি এফসি এশিয়ান কাপের দিকে যদি আমরা নজর দিই, কাতার-সৌদি আরব-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া এইসমস্ত দেশের কথা আমরা বাদই দিলাম। এই দেশগুলি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোচকে আনার ক্ষমতা রাখে, তাঁদের সেই আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। তবে অর্থের দিক থেকে উন্নত দেশগুলির কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি এশিয়ার সেই সমস্ত দেশগুলির বিষয় আলোচনা করি যারা এবারের এশিয়ান কাপে নজর কেড়েছে, তাহলেই বুঝতে পারবেন ভারত কোথায় পিছিয়ে রয়েছে।
কাতারের বিরুদ্ধে এশিয়ান কাপ ফাইনাল খেলতে চলেছে জর্ডান। জর্ডানের কোচ হলেন মরক্কোর হুসেন আম্মোউতা। উয়েফা প্রো লাইসেন্স প্রাপ্ত হুসেনের বর্তমান মূল্য প্রায় ৩ মিলিয়ন থেকে ৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। অর্থাৎ প্রায় ২৫ কোটি টাকা থেকে ৪১ কোটি টাকা। ক্লাব ফুটবলে অত্যন্ত সফল একজন কোচ হলেন হুসেন। মরোক্কান চ্যাম্পিয়ন, আফিকান নেশনস চ্যাম্পিয়নশিপ, সিএএফ কনফেডারেশন কাপ, সিএএফ চ্যাম্পিয়নস লিগ,কাতার চ্যাম্পিয়ন হুসেন আম্মোউতা।
অন্যদিকে যুদ্ধ আক্রান্ত আরও একটি দেশ হল ইরাক। ২০২২ সালে ইরাকের জাতীয় কোচ হিসাবে নিযুক্ত হন জেসাস কাসাস। তাঁর বেতন বছর প্রতি ১ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৮ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। তাঁর এতো দাম হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। ২০১৪-১৭ সালের মাঝে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, লা লিগা স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ী দলের ম্যাচ এনালিস্ট ছিলেন তিনি। জর্ডানের বিরুদ্ধে রাউন্ড অফ ১৬য় শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে পরাজিত হয় ইরাক দেশ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইন দেশের কথা ভাবুন, চলতি এশিয়ান কাপের রাউন্ড অফ ১৬-য় পৌঁছেছিল। আতঙ্ক নিয়ে খেলতে নামত প্যালেস্টাইন ফুটবলাররা এমনটাই জানিয়েছিলেন তাঁদের কোচ মাকরাম দাবৌব। শক্তিশালী কাতারের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে পরাজিত হয়ে এশিয়ান কাপকে বিদায় জানাতে হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু ধুঁকতে থাকা একটি দেশের মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলেন তাঁরা।
কিন্তু ভারতে তো সেই সমস্যা নেই। এখানে প্রতিদিন বোম পড়েনা, পরের দিনের সকাল দেখা যাবে কিনা সেই অনিশ্চয়তা নিয়েও ঘুমাতে যাননা ১৪০ কোটি ভারতবাসী। এখানে অর্থেরও অভাব নেই, ক্রিকেট খেলায় কয়েকশো কোটি খরচ করা হয় ক্রিকেট বোর্ডের তরফে। তৃণমূল স্তর থেকে তুলে আনা হয় ক্রিকেটারদের। কিন্তু সেই দেশেই ফুটবলের উন্নতির জন্য ভাবা হয়না দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। স্টিমাচ ভারতকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে নিয়ে যেতে পারবেন, এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করাতে পারবেন। কিন্তু এশিয়া বা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মঞ্চে ভারতীয় দলকে ভালো ফল করতে হলে আরও বড় মাপের কোচ আনতে হবে। ভালো কোচের জন্য বাড়াতে হবে বাজেট। বড় আর্থিক অফার পেলে ভালো কোচ আসবেনই, তাঁর উদাহরণ ইরাক, জর্ডানের দেশগুলি। যদিও স্টিমাচকে আমরা কোনওভাবেই অপমান করছি না। তবে শুধু যোগ্যতা অর্জনই নয় ভারতীয় ফুটবল দলের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ টুর্নামেন্ট জয়ের।