কোপা আমেরিকা ফাইনালে ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা - কে এগিয়ে? দেখুন প্রতিটি বিভাগের পর্যালোচনা

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : চলতি কোপা আমেরিকার দুই সেরা দলই ফাইনালে। একদিকে দুর্দান্ত দল নিয়ে আসা চুড়ান্ত ফেভারিট ব্রাজিল, অন্যদিকে লিওনেল মেসির অসাধারণত্বে ফুটে ওঠা আর্জেন্টিনা। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, বিশ্ব ফুটবলের সবথেকে বড় ম্যাচে কে ছিনিয়ে নেবে কোপা আমেরিকা ২০২১?
দুটি দলই দীর্ঘ সময় ধরে অপরাজয়ের রেকর্ড জারি করে রেখেছে। আর এর জেরে ফাইনালে একজনের জয়যাত্রার ইতি ঘটবে। কিন্তু চলতি কোপা আমেরিকায় দুই দলই অসাধারণ পারফর্ম করে এসেছে। আর এর জেরে আমরা দেখে নেব, প্রতিটি বিভাগে কেমন পারফর্ম করেছে এই দুই হেভিওয়েট দেশ।
গোলকিপিং - এই বিভাগে ব্রাজিল নিঃসন্দেহে অনেকটাই এগিয়ে। তাদের এক নম্বর গোলকিপার অ্যালিসন এখনও একটিও ম্যাচ খেলেননি। অপরদিকে এডারসন দুটি নক আউট ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করেছেন। আর তৃতীয় গোলকিপার ওয়েভের্টনও বেশ ভালো হাতের কাজ দেখিয়েছেন কোপার শুরুতে।
অপরদিকে আর্জেন্টিনার ভরসা হয়ে উঠেছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। সেমিফাইনালে তিনটি পেনাল্টি সেভ করে আত্মবিশ্বাস চরমে মার্টিনেজের। ফলে আত্মবিশ্বাসে মার্টিনেজ এগিয়ে থাকলেও এডারসন কিন্তু বিশ্বের সেরাদের একজন।
ডিফেন্স - ব্রাজিল কোচ টিটের চিন্তার ভাঁজ থাকবে থিয়াগো সিলভাকে খেলানো নিয়ে। সেমিফাইনালে নিজের বয়স ও স্লথতার জন্য বারবার ভুগছিলেন সিলভা, যার জেরে পেরু অনেকটাই আগ্রাসী ছিল। এই পরিস্থিতিতে টিটে চাইবেন ফাইনালে দুরন্ত ফর্মে থাকা মারকুইনহোসের পাশে এডের মিলিটাওকে নামাতে। কারণ মেসি-লাউটারো মার্টিনেজের গতির সামনে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বেন ৩৭ বছরের থিয়াগো সিলভা, বরং মিলিটাও তরুণ হওয়ায় তুলনায় ভালো কাজ করতে পারেন।
এদিকে আর্জেন্টিনার কাছে বড় ধাক্কা হয়ে গিয়েছে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর অনিশ্চয়তা। এমন পরিস্থিতিতে নিকোলাস ওটামেন্ডির পাশে খেলবেন জার্মান পেজ্জেলা। যার ফলে নেইমার-রিচার্লিসনের গতির বিরুদ্ধে বেশ সমস্যায় পড়বে আর্জেন্টিনা। কিন্তু মারকুইনহোসের উপস্থিতি এক্ষেত্রে ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখছে।
মিডফিল্ড - এক্ষেত্রে দুই দলই তিন মিডেই নামতে পারে। টিটের ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা হবে না বাছাই করতে, যেখানে তিনি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে ক্যাসেমিরোকে নামিয়ে দুই প্রান্তে লুকাস পাকুয়েতা ও ফ্রেডকে নামিয়ে দেবেন। এই তিন ফুটবলারের অফুরন্ত এনার্জি ব্রাজিলের মিডফিল্ডকে সদা সচল রাখে।
এদিকে আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে লিওনেল স্কালোনি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে ফিরিয়ে আনবেন লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে, যিনি বাকি দুই মিডফিল্ডার রড্রিগো ডে পল ও জিওভানি লো সেলসোকে বল বাড়াতে সাহায্য করবেন। এই ত্রয়ীর শক্তিতে আর্জেন্টিনার যাবতীয় আক্রমণ পরিচালিত হয়। যদিও ব্রাজিলের মিডফিল্ড তুলনায় ডিফেন্সিভ, অন্যদিকে আর্জেন্টিনা তুলনায় আক্রমণাত্মক। যার জেরে মাঝমাঠের দিক থেকে পয়েন্ট ভাগাভাগি হবে।
আক্রমণ - এই জায়গায় দুই দলের প্রকৃত ভরসারাই অবতরণ করবেন। ব্রাজিলের ক্ষেত্রে আক্রমণ সহ পুরো দলই পরিচালিত হয় নেইমারকে কেন্দ্রীভূত করে, আর একই অবস্থা আর্জেন্টিনায় মেসিকে নিয়ে। কেবল তফাৎ হল, নেইমারের চারপাশে খেলা তৈরি হয় এবং তিনি নিজেও সেই খেলা তৈরিতে এগিয়ে আসেন, কিন্তু মেসি নিজেই খেলা তৈরি করেন।
ব্রাজিলের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হল গ্যাব্রিয়েল জেসুসের নির্বাসন। এর জেরে তেমন ভালো ফর্মে না থাকা এভার্টন সোয়ারেসকে খেলাতে হচ্ছে টিটেকে। এদিকে নেইমার ও রিচার্লিসনের জুটি অসাধারণ ভূমিকা নিচ্ছে আক্রমণে। তবে ফাইনালে কোচ টিটে কি তথাকথিত সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড নিয়েই নামবেন? সেক্ষেত্রে কিন্তু রবার্তো ফিরমিনো ও গ্যাব্রিয়েল বারবোসার মত অপশন রয়েছে টিটের হাতে।
এদিকে আর্জেন্টিনার আক্রমণে প্রত্যেকেই ছন্দে রয়েছেন। লিও মেসির কথা ছেড়েই দিলাম, লাউটারো মার্টিনেজ এবং আলেজান্দ্রো গোমেজ গোল করছেন, পরিবর্ত হিসেবে নামা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া দারুণ ফর্মে রয়েছেন। ফলে বলাই যায়, আক্রমণের দিক থেকে মেসি থাকা সত্ত্বেও আর্জেন্টিনা ভালোমতই এগিয়ে ব্রাজিলের থেকে।
সুতরাং, গোলকিপিং ও ডিফেন্সে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে এগিয়ে থাকবে আর্জেন্টিনা, কেবল মিডফিল্ডেই সমানে সমানে। কিন্তু খেলাটা ৯০ মিনিটের, আর তারপর সুযোগ এলে পেনাল্টি শুট আউট নামক ভাগ্যখেলায়। ফলে মাঠের পারফর্মেন্সই শেষ কথা বলবে।