ড্র। লিড ধরে রাখতে ব্যর্থ এটিকে মোহনবাগান। 'ট্র্যাজিক নায়ক'মনবীর। বিস্তারিত পড়ুন...

এটিকে মোহনবাগান : ১ (মনবীর : '৫৪)
হায়দ্রাবাদ এফসি : ১ (জোয়াও ভিক্টর : '৬৫ পেনাল্টি)
সব্যসাচী বাগচী : অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনিই হতে পারতেন 'নায়ক'। তবে 'পঞ্জাব কা পুত্তর' মনবীর সিং'কে 'ট্র্যাজিক নায়ক' হিসেবে শুক্রবার রাতে ফতোরদা স্টেডিয়াম ছাড়তে হল। কারণ, তাঁর চোখধাঁধানো গোলে এটিকে মোহনবাগান যতই এগিয়ে যাক, সেই ডার্বি যুদ্ধে গোল করা মনবীরের ভুলেই যে গোল হজম করল সবুজ-মেরুন। ফলে ১-১ গোলে ড্র হল ম্যাচ। তবে একইসঙ্গে মনে গেঁথে গেল দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে জুড়ে থাকা সোদপুরের 'স্পাইডার ম্যান' সুব্রত পালের অনবদ্য গোলকিপিং। কারণ, 'ফরচুন ফেবার্স দ্যা ব্রেভ'।
যদিও প্রথমার্ধে সুব্রত পাল ম্যাজিক দেখার পর, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা করলেন তরুণ মনবীর সিং। বিপক্ষের চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে প্রায় মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে একক দক্ষতায় অসাধারণ গোল। ৫৪ মিনিটে মনবীরের গোলের সৌজন্যে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। 'মিষ্টু' এগিয়ে এলেন। কিন্তু তাঁর কিছুই করার ছিল না।
অগুনিত সবুজ-মেরুন সমর্থক ও হেড কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের মুখে হাসি ফোটানো মনবীর যে এত বড় ভুল করে বসবেন, সেটা হয়তো তিনিও ভাবতে পারেননি। ৬৪ মিনিটে বক্সের ভেতর বিপক্ষের নিখিল পূজারী'কে পেছন থেকে ফাউল করেন মনবীর। হায়দ্রাবাদকে পেনাল্টি দিতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি রেফারি হরিস কুন্ডু। এবং এই সুযোগে জোরালো শটে গোল করে সমতা ফেরান ব্রাজিলিয়ান জোয়াও ভিক্টর। অরিন্দম তাঁর ডানদিকে ঝাঁপিয়ে শট আটকানোর চেষ্টা করলেও বল তাঁর হাতের উপর দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়।
মনের জোর থাকলে মাত্র দুজন বিদেশি নিয়েও তারকাখচিত দলের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। তবে মাত্র দুই বিদেশি নিয়ে মাঠে নামলে কি হবে, সুব্রত পাল তো আছেন। তিনি যেন 'একাই একশ'। প্রথমার্ধে মুহূৰ্মহু আক্রমণ চালিয়ে গেলেন রয় কৃষ্ণা-এডু গার্সিয়া-প্রবীর দাস'রা। তবে আটকে গেলেন সেই সোদপুরের 'মিষ্টু'র কাছে। যেন 'চীনের প্রাচীর'এর মত পুরোনো দলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন ভারতীয় ফুটবলের 'স্পাইডার ম্যান'। তিনি তিন কাঠির নীচে না দাঁড়ালে প্রথমার্ধে অন্তত তিন গোলে এগিয়ে যেত সবুজ-মেরুন বাহিনী।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে। 'পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে'। সোদপুরের সুব্রত'র ক্ষেত্রেও তাই। ম্যাচের বয়স তখন ৯ মিনিট। সুযোগ এসেছিল এটিকে মোহনবাগানের সামনে। হেড করেছিলেন রয় কৃষ্ণা। তবে ডানদিকে শরীর ছুড়ে দলকে বাঁচান সুব্রত। কৃষ্ণের দুরন্ত চেষ্টা। তবে ফিজি'র স্ট্রাইকার তো থেমে যাওয়ার বান্দা নন। ১৭ মিনিটে আবার গোলের দিকে শট করেন। কিন্তু তাঁর শট বাইরে চলে গেল।
দুটি সুযোগ হারালেও থেমে থাকেনি আবার অপ্রতিরোধ্য সুব্রত গোল। ২৭ মিনিটে হায়দ্রাবাদ গোলমুখে ফের হানা দিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। যদিও ফের অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন সুব্রত। বক্সের মধ্যে প্রবীর দাসের শট অসামান্য দক্ষতায় ধরলেন তিনি। এবং চোখধাঁধানো গোলকিপিং প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত বজায় রইল। কারণ, ৩৬ মিনিটে ফের রয় কৃষ্ণার শট প্রতিহত করেন সুব্রত। ফিরতি বল হেডে পুনরায় হায়দ্রাবাদের জালে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন এডু গার্সিয়া। সুব্রত এক্ষেত্রেও সতর্ক ছিলেন। তিনি বল দস্তানাবন্দি করেন। তাঁকে পরাস্ত করা যায়নি।
শেষ পর্যন্ত তিনি একেবারে খালি হাতেও ফিরলেন না। কারণ, বিপক্ষের মনবীর যে এই ম্যাচে ট্র্যাজিক নায়ক'। তিনি যেমন দলকে এগিয়ে দিলেন। তেমনই তাঁর ক্ষণিকের ভুলে তিন পয়েন্ট হারাল এটিকে মোহনবাগান। তবে হায়দ্রাবাদের লড়াইয়ের কথাও মনে রাখতে হবে। মাত্র দুই বিদেশি মাঠে, হেড কোচ ম্যানুয়েল রোকা গত ম্যাচে 'মার্চিং অর্ডার' দেখার জন্য বেঞ্চে ছিলেন না। তবুও হাবাসকে টেক্কা দিয়ে গেলেন দলের ভারতীয় সহকারী কোচ থ্যাংবৈ সিংটো।
এটিকে মোহনবাগান : সুমিত রাঠি/শুভাশিস বোস, সন্দেশ জিঙ্গান (অধিনায়ক), মনবীর সিং, কার্ল ম্যাকহাউ, এডু গার্সিয়া/প্রণয় হালদার, ব্র্যাড ইনমান/ডেভিড উইলিয়ামস, গ্লেন মার্টিন্স/জয়েস রানে, প্রীতম কোটাল, রয় কৃষ্ণা, অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোলকিপার), প্রবীর দাস/মাইকেল রেগিন
হায়দ্রাবাদ এফসি : সুব্রত পাল(অধিনায়ক/গোলকিপার), চিংগ্লেনসানা সিং, জোয়াও ভিক্টর, লিস্টন কোলাকো, ওডেই ওনাইন্ডিয়া, হিতেশ শর্মা, হোলি চরণ নার্জারি, সৌভিক চক্রবর্তী, নিখিল পূজারী, আকাশ শর্মা, আশিস রাই