সাদিকু ম্যাজিকে কোচিকে সবুজ-মেরুনে রাঙাল মোহনবাগান

কেরালা ব্লাস্টার্স - ২ (ভিবিন মোহানন, দিমিত্রিওস দিয়ামান্টাকোস)
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট - ৪ (আর্মান্দো সাদিকু - ২, দীপক টাংরি, জেসন কামিংস)
এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : হেভিওয়েট মহারণ যেন এভাবেই হয়। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না। শেষ ৫ ম্যাচে ৪টিতে হারলেও কোচিতে ভয়ঙ্কর কেরালা ব্লাস্টার্স। কিন্তু হাবাসের মোহনবাগান অন্য ধাতুতে গড়া। এই মোহনবাগানে নায়ক সবাই। আর এই ম্যাচের নায়ক হলেন আর্মান্দো সাদিকু। তার জোড়া গোল, দীপক টাংরির হেডার এবং জেসন কামিংসের জয়সূচক গোলে কেরালার সকল প্রত্যয়কে ধুয়েমুছে সাফ করে দিল মোহনবাগান।
শুরু থেকে জনি কাউকো ও সাহাল আব্দুল সামাদকে খেলিয়ে হাবাস বুঝিয়ে দেন, আক্রমণাত্মক ফুটবলেই তারা যাবে। প্রথম মিনিট থেকেই যেন গোল করতেই হবে, এই ভাবনাতেই নেমেছিল মোহনবাগান। যে কারণে প্রথম ২০ সেকেন্ডেই গোলমুখী শট মারেন আর্মান্দো সাদিকু। তবে কেন তার প্রতি ভরসা রাখা উচিত, সেটা ৪ মিনিটেই বুঝিয়ে দিলেন সাদিকু। কার্যত একক দক্ষতায় আনোয়ার আলির বাড়ানো বল নিয়ে এক টাচে প্রীতম কোটালকে কাটিয়ে করনজিত সিংকে পরাস্ত করে গোল করেন আলবেনিয়ার ফরোয়ার্ড।
শুরুতেই গোল খেয়ে যেন সম্বিত ফেরে কেরালার। দিমিত্রিওস দিয়ামান্টাকোসের নেতৃত্বে ব্লাস্টার্স মোহন রক্ষণে চাপ দিতে থাকে। ১৪ মিনিটে দাইসুকের শট বাঁচান বিশাল কাইথ। পাশাপাশি মোহনবাগান পজেশনাল ও বিল্ড আপ ফুটবলে আক্রমণে উঠছিল বারবার। তবে কেরালার আক্রমণের আধিক্যই ছিল প্রথমার্ধে, যদিও সদা সতর্ক ছিলেন হেক্টর-আনোয়ার।
আরও পড়ুন- আমরা তৃতীয় রাউন্ডে উঠবই! আত্মবিশ্বাসী স্টিম্যাচ
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফের আক্রমণে ফেরে মোহনবাগান। ৫০ মিনিটে জনি কাউকোর দুরপাল্লার গোলার মত শট ধরে নেন করনজিত। একের পর এক আক্রমণে কেরালা ডিফেন্সকে বিপদে ফেলছিলেন মনবীর-সাদিকুরা। কিন্তু ৫৪ মিনিটে সমতায় ফেরে কেরালা। রাহুল কেপির সাথে দুর্দান্ত ওয়ান-টুতে শুভাশিস ও হেক্টরের মাঝখান থেকে শট মেরে গোল করেন ভিবিন মোহানন।
আরও পড়ুন- AIFF-এর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে আরও বিপদে পড়ল কেরালা ব্লাস্টার্স!
গোল খাওয়ার পরে তেড়েফুঁড়ে ওঠে সবুজ-মেরুণ ব্রিগেড। ৬০ মিনিটেই আবারও এগিয়ে যায় মোহনবাগান। দিমিত্রি পেত্রাতোসের ফ্রিকিক থেকে মনবীর হেড করে রাখেন বক্সে, সেখান থেকে ডান পায়ে অনবদ্য ভলিতে গোল করেন সাদিকু। তবে তার তিন মিনিট পরেই আবারও গোল শোধ করে ব্লাস্টার্স। ফেদোর সেরনিচের পাসে বল পান দিয়ামান্টাকোস, পিছনে থাকা আনোয়ারকে শারীরিক শক্তিতে বিট করে গোল করেন তিনি।
আবারও গোল খাওয়ার পর পুনরায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে মোহনবাগান। ৬৮ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নামা অভিষেক সূর্যবংশীর দুরপাল্লার শট বাঁচান করনজিত, সেখান থেকে কর্নার পায় মোহনবাগান, আর তাতেই আসে তৃতীয় গোল। দিমিত্রি পেত্রাতোসের কর্নার থেকে কার্যত ফ্রি হয়ে থাকা দীপক টাংরি দুরন্ত হেডারে গোল করেন।
এরপর আরও কয়েকটা গোল হয়ত পেতে পারত মোহনবাগান। ৭৩ মিনিটে মনবীর সিংয়ের দুরন্ত মাইনাস ধরতে যান সাদিকু, কিন্তু পিছন থেকে পা বাড়িয়ে সাদিকুকে ফেলে দেন সন্দীপ সিং। এরপর মোহনবাগান ফুটবলাররা পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি হরিশ কুন্ডু তা দিতে রাজি হননি। যদিও রিপ্লেতে বোঝা যায়, পেনাল্টি দিতেই পারতেন রেফারি। ৭৬ মিনিটে আশিস রাইয়ের ভাসানো বল ধরে দিমিত্রির জন্য বল সাজিয়ে দেন সাদিকু, কিন্তু দিমির শট বারে লাগে। ৭৮ মিনিটে দিমিত্রি একা ডিফেন্ডারকে নিয়ে এগিয়ে গেলেও তার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর অতিরিক্ত সময়ে অভিষেকের থ্রু পাসে প্রায় ফাঁকায় পরিবর্ত হিসেবে নামা লিস্টন কোলাসো এগিয়ে যান বক্সের দিকে, কিন্তু করনজিত এগিয়ে এসে বাঁচিয়ে নেন, সেখান থেকে বল পেয়ে পরিবর্ত হিসেবে নামা জেসন কামিংস শট মারলে সেটি বাঁচিয়ে নেন মার্কো লেস্কোভিচ।
কিন্তু শেষে কাঙ্ক্ষিত চতুর্থ গোলটি করেই ফেলে মোহনবাগান। অতিরিক্ত সময়ের ৬ মিনিটে জনি কাউকোর ভাসানো বল নিয়ে এগিয়ে যান লিস্টন কোলাসো, সেখান থেকে বল রাখেন বক্সে মনবীরের উদ্দেশ্যে, যার প্রয়াস বাঁচিয়ে নেন লেস্কোভিচ, আর সেই ফিরতি বলে শট মেরে গোল করেন কামিন্স।
তবে খেলা শেষ হইয়াও শেষ হইল না। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে এমানুয়েল জাস্টিনের ক্রসে হেড করে গোল করেন দিয়ামান্টাকোস। কিন্তু শেষ অবধি জয় পেল মোহনবাগান।