চেখভ মুখোপাধ্যায় : রায় বাহাদুর স্যার বদ্রীদাস গোয়েঙ্কা ছিলেন ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্কের প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান। পরবর্তীকালে ওনার হাত ধরেই ব্যাঙ্কের রাষ্ট্রায়াত্তকরণ হয়। এখন যার নাম 'স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া'। এবং উনি SBI'এরও প্রথম চেয়ারম্যান। এটা একটা ইতিহাস!

RPG গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করার পরে যখন দাদু স্যার বদ্রীদাস গোয়েঙ্কাকে নাতি রমাপ্রসাদ জিজ্ঞেস করলেন যে যখন অনেকে বাংলা তথা কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তখন কি উচিত না তাদের ও চলে যাওয়া! স্যার বদ্রীদাস নাতিকে বলেছিলেন যে "তুমি তোমার মতন সিদ্ধান্ত নিতেই পারো, কিন্তু কলকাতা ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।"

প্রেসিডেন্সি গ্র্যাজু়য়েট রমাপ্রসাদ বাবু যখন পারিবারিক ব্যবসায় আসেন তখন বয়স্ মাত্র একুশ। সেই সময়ে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলায় বাংলাকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শুধু ব্যাডমিন্টন কেন! আন্ত-বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট খেলাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন। বেগুনি-তেলেভাজার প্রেমে পড়েছিলেন। আদ্যন্ত মারওয়ারি হয়েও ওনার মতন বাঙালি পাওয়া মুশকিল। দশমীর দিন নিজের বাড়ির তৈরী মিষ্টি নিয়ে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বিজয়া সারতে বেরোতেন। ওনার বিখ্যাত উক্তি, "আমি বাঙালি, নয়ত কে?"

ভারতবর্ষের লোকসভার প্রথম বাঙালি অধ্যক্ষ সোমনাথ চ্যাটার্জী, " The takeover king" রমাপ্রসাদ গোয়েঙ্কা'কে এমনি এমনি ফাইটার বলতেন না, তার কথায় "No one short of a gutsy fighter could have built such an empire in those time. I salute him for his commitment to Bengal."

১৯১১ সালে যখন পরাধীন ভারতবর্ষে খালি পায়ে এগারোজন ভারতীয় মিলে ইতিহাস রচনা করল, "কল্লোল যুগ"এ অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত লিখলেন, "Mohun Bagan is not a football team. It is an oppressed country, rolling in the dust, which has just started to rise its head."

রয়টার্স তাদের cablegram'এ লিখল, "The scene beggared description, the Bengalees tearing off their shirts and waving them...."

Mussalman লিখল, "The members of the Muslim Sporting Club were almost mad and rolling on the ground with joyous excitement on the victory of their Hindu brethren."

The Englishman লিখল, "Mohun Bagan has succeeded in what the Congress and the swadeshiwallas have failed to do so far — to explode the myth that the Britishers are unbeatable in any sphere of life."

এত কিছু লেখার কারণ আর কিছুই নয়। সঞ্জীব
গোয়েঙ্কাবাবুরা ইতিহাসকে আঁকরে ধরে প্রপিতামহ স্যার বদ্রীদাস অথবা বাবার পদানুসরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করবেন, না ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাবেন এটা তাঁর ইচ্ছা। স্পেনের ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি হলে বিদেশি ক্লাবের নাম অনুসারে নাম রেখে দিলেন, কিন্তু স্বদেশীয় ঐতিহাসিক খালি পায়ে ব্রিটিশদের হারানো ক্লাবের ক্ষেত্রে নিজের মতন তিনটে অক্ষর জুড়ে দিলেন, সেটা ভারতীয় হয়ে কতটা সম্মানজনক বুঝতে হবে। ভাবুন তো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আগে পরে অন্য ক্লাবের নাম! অথবা বার্সা, রিয়াল মাদ্রিদ!! সম্ভব? আর কবে আমরা হেরিটেজের সন্মান করতে শিখব!

সঞ্জীববাবু আপনাকে বাইরে যেতে হবে না, আপনি দেশের গড়িমা বহন করার অভিজ্ঞতা আপনার ঘরেই পাবেন। আদ্যন্ত মোহনবাগানপ্রেমী বাবার কথা অন্তত ভাববেন 'লোগো' নিয়ে আলোচনা করার সময়। আর ভাববেন তিন মাস পরে বিক্রি হওয়া চ্যাম্পিয়ন T-Shirt'গুলো মুহুর্তের মধ্যে Amazon'এ বেস্ট সেলর করার পিছনে ওই সমর্থকদের কথা! আইএসএল বাঁচাতে হলে ওই সমর্থকগুলো দরকার। যেমন আপনাদের মতন কর্পোরেট হাউসও প্রয়োজন। যতই রঙের জার্সি আনুন, বিক্রি হবে কিন্তু সবুজ-মেরুন।

একটা কথা মনে রাখা দরকার এই মোহনবাগান ক্লাবই রমাপ্রসাদবাবু'কে সাম্মানিক মেম্বারশিপ দিয়ে সম্পর্কের পথ চলা শুরু করেছিল। তাই আপনি ইতিহাসের সঙ্গী হবেন, না অন্য কিছু ভাববেন, সেটা তো সময়ই বলবে। সেখানে আমাদের আর কিছু বলার নেই। তবে মনে রাখবেন ইতিহাসের উপর ভিত্তি করেই কিন্তু ভবিষ্যতের রাস্তা তৈরি হয়।