কোহিনুর থেকে ইউরো, ফুটবল ও ক্রিকেট বিশ্বকাপ - ইংল্যান্ডের অধিকাংশ সাফল্যেই রয়েছে কালো দাগ

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : চলতি ইউরোয় একাধিক বিতর্কিত ঘটনার মধ্যে বড় ঘটনা ঘটেছে সেমি ফাইনাল ম্যাচে। যেখানে রেফারি ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডকে একটি অন্যায্য পেনাল্টি দেন। রাহিম স্টার্লিং বক্সের মধ্যে পড়ে যান, কিন্তু রিপ্লেতে স্পষ্ট নয় যে স্টার্লিংকে কেউ ধাক্কা মেরেছিল। ভিএআর থাকতেও সেটি পেনাল্টিই হয়। আর সেই পেনাল্টি সেভ হলেও রিবাউন্ড থেকে গোল করে ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তোলেন হ্যারি কেন।
যদিও যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড, আর ইউরোর ইতিহাসে এই প্রথমবার ফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড। কিন্তু এমন বিতর্ককে মাথায় রেখেই কিন্তু এই কৃতিত্বটি অর্জন করতে হল সাউথগেটের ব্রিগেডকে। বিশেষ করে খেলাটা যখন হয়েছে ঘরের মাঠে, অর্থাৎ লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে।
কিন্তু প্রশ্ন আসছেই, রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কি আদতেই দোষ দেওয়া যায় ইংল্যান্ডকে? রাহিম স্টার্লিং এর আগেও এমন নাটুকে ডাইভ দিয়েছেন, তবে উনি একা নন, এর আগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমার, সুয়ারেজরাও একই নাটক দেখিয়ে এসেছেন। কিন্তু বিতর্ককে মাথায় করে নিয়েই ইংল্যান্ডকে এই ফাইনাল খেলতে হবে।
শুধু ইউরোর ফাইনাল নয়, এর আগে যত সাফল্য অর্জন করেছে ইংল্যান্ড, অধিকাংশেই ছিল বিতর্কে ভর্তি। কোহিনুর চুরি থেকে ১৯৬৬ ফুটবল বিশ্বকাপ, আর সম্প্রতি ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ - প্রতিটি সাফল্যের পিছনেই রয়েছে বিতর্ক। কিন্তু সত্যিই কি তাতে ছলনা ছিল? দেখে নেওয়া যাক।
ইংরেজদের হাতে পরাধীন থাকাকালে দেশের সবথেকে দামী হীরা কোহিনুর নিয়ে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। অনেকের দাবি, সেই হীরা চুরি করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। যদিও সে নিয়ে বিতর্ক রয়েইছে। আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এই বিষয়ে আরটিআইয়ে জানিয়েছে, চুরি নয়, বরং বাধ্য হয়ে ১৮৪৯ সালে লাহোর চুক্তি অনুযায়ী লর্ড ডালহৌসির হাতে তুলে দিয়েছেন লাহোরের মহারাজ দলীপ সিং। যদিও সুপ্রিম কোর্টের রায় অন্য কথা বলছে। ফলে এই নিয়ে বিতর্ক রয়েই আছে।
এরপর আসা যাক দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল। পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে সেই খেলার ১০১ মিনিটে জিওফ হার্স্টের একটি শট ক্রসবারে লেগে গোল লাইন ছুঁয়ে ফিরে আসে। যদিও সুইস রেফারি গটফ্রাইড ডিয়েনস্ট কোনও সিদ্ধান্ত নেননি, বরং সোভিয়েত লাইন্সম্যান তোফিক বাখরামোভ সিদ্ধান্ত দেন গোলের। আর সেই নিয়ে আজও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জার্মানরা।
যদিও বিতর্ক আসে, ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে রেফারিদের প্রভাবিত করেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু বাখরামোভের স্মৃতিকথা অনুযায়ী, তিনি যখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং তাকে সেই গোলের সিদ্ধান্তের কথা জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তিনি কেবল বলেছিলেন, 'স্তালিনগ্রাদ'। এই কথাটির অর্থ কি? আসলে স্তালিনগ্রাদ ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি শহর যেখানে এক সময়ে নাজি জার্মানি প্রায় ৭৫ হাজার সোভিয়েতবাসীকে হত্যা করে। অনেকে বলে, তার বদলা নিতেই জার্মানির বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাখরামোভ। আর সেই সুবিধা পেল ইংল্যান্ড, প্রথমবার ফুটবলে বিশ্বজয়ী হয়ে।
আর শেষে আসা যাক সব থেকে সাম্প্রতিক বিষয়, যা হল ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেই ফাইনালে অসাধারণ ব্যাটিং করেছিলেন বেন স্টোকস। শেষের দিকে স্টোকস রান নেওয়ার সময় মার্টিন গাপটিল একটি থ্রো করেন ব্যাটিং এন্ডের দিকে, যা ঝাঁপানো স্টোকসের গায়ে লেগে বাউন্ডারিতে চলে যায়। স্টোকস যদিও হাত তুলে নিজের নির্দোষিতা স্বীকার করেন। কিন্তু সেই বাউন্ডারির জেরে খেলা সুপার ওভারে যায়। আর সুপার ওভারও টাই হওয়ায় কেবল বেশি বাউন্ডারি মারার জেরে ম্যাচ জিতে যায় ইংল্যান্ড।
যদিও এই বিষয়তেও বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞ ও প্রখ্যাত আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার ভুল এবং আইসিসির একটি অপর্যাপ্ত নিয়মের জেরেই এই বিতর্ক ঘটল। নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড, এই দুই দলই অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। এবং ম্যাচের পরেও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটাররা কেউ এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেননি। কিন্তু আবারও ইংল্যান্ডের সাফল্যে রইল সেই বিতর্ক।