জীবন জুড়ে শুধুই কি অভিমানের পাহাড় জমেছিল কিংবদন্তি রবিচন্দ্রন অশ্বিনের?

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক: জীবন জুড়ে শুধুই কি অভিমানের পাহাড় জমেছিল কিংবদন্তির! গত এক দশকের বেশি সময় জুড়ে ভারতীয় ক্রিকেটে ব্যর্থতার থেকে সাফল্য অনেক বেশি। ১৪ টা বছর সেই সাফল্যের পাশে সময় উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল তাঁর। সাফল্যের পেনিল চূড়ায় নীলকথা লেখা হয়েছে কখনো ধোনির কখনো বিরাটের কখনো রোহিত শর্মা। তিনি থেকে গেছেন নেপথ্যনায়ক। ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি দলে ছিলেন, কিন্তু প্রথম ১১ খেলেছিলেন হরভজন সিং।
১৪ বছরের বর্ণময় কেরিয়ারের সমাপ্তি ঘটল নিভৃতে। কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত যেন খানিক আগেই পাওয়া গিয়েছিল। ড্রেসিংরুমে অশ্বিনকে যখন জড়িয়ে ধরলেন বিরাটকে তখনই অনেক প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল বৈকি। আর ম্যাচ শেষে রোহিতকে পাশে বসিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন যখন যেন একটু অভিমানী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ৭৬৫টি উইকেটের মালিক।
তাঁর বর্ণময় ক্রিকেট কেরিয়ারের টেস্টে ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সবচেয়ে বেশি (১১ বার) সিরিজের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন অশ্বিন। WTC-এ ১০০টি উইকেটের মালিক হওয়া প্রথম বোলার অশ্বিন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ৪১টি ম্যাচে ১৯৫টি উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু সেই অশ্বিনই WTC সেমি ফাইনালে দুরন্ত বোলিং করার পরও পাননি ফাইনালে খেলার সুযোগ। অধিনায়ক হিসেবে ধোনি, কোহলি বা রোহিত যেই থাকুক না কেন তাঁর কেরায়ার জুড়ে বহু সিরিজে ঘটেছে এমন ঘটনা কিন্তু আশ্বিন নিঃশব্দেই মুখ বুজে মেনে নিয়েছেন সবকিছুই।
তাঁর স্পিনের ভেল্কিতে দিশেহারা হয়ে যান বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যানরা। তবে শুধু বল করেই ভারতকে ম্যাচ জেতাননি, ব্যাট হাতে হয়ে উঠেছেন ক্রাইসিস ম্যানেজার। দেশে হোক বা বিদেশ, ভারতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেই মাঝে মধ্যেই কঠিন সময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন অশ্বিন। টেস্ট ক্রিকেটে মোট ৬ টি শতরান রয়েছে অশ্বিনের। আর এই টেস্ট ক্রিকেটেই শতরানের নিরিখে ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মাসিহা, বিশ্বজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব ও মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে একই আসনে বসবেন অশ্বিন। কপিল, ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহান তারকা যে সম্মান যে উচ্চতা পেয়েছেন। সেই উচ্চতা কখনও পাননি অভিমানী রাজপুত্র অশ্বিন।
২০২১ সালে এই বর্ডার-গাভাসকার সিরিজের সিডনি টেস্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন অশ্বিন। সেই ম্যাচে হনুমা বিহারী এবং চেতেশ্বর পূজারার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তিনি। ১২৮ বলে অশ্বিনের করা ঐ ৩৯ রানের ইনিংস শতরানের থেকেও অনেক অনেক বেশি দামি ছিল। সিডনির বাউন্স ভরা উইকেটে সারা শরীরে বলের ছাপে আহত হয়েছিল কিন্তু তাঁকে টলাতে পারেননি অজি বোলাররা। সামনে আরও একটা সিডনি টেস্ট সবকিছুই থাকবে, শুধু থাকবেন না ভারতীয় ক্রিকেটার এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোলারটি। আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে হয়তো এভাবেই বুঝিয়ে দিতে চাইলেন আমি না থাকলে কিছু এসে যাবে হয়তো। কিটুটা হয়তো বা না।
সেঞ্চুরি টেস্টে খেলতে নামার আগে অভিমানী অশ্বিন একবার বলেছিলেন, "বহু বিদেশ সফরে আমি খেলার সুযোগ পাইনি। একজন ব্যাটার একটি ম্যাচে ব্যর্থ হলেও পরের ম্যাচে সুযোগ পান। কিন্তু আমাদের বোলারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্য। তারা উইকেট না পেলে পরের ম্যাচে বাদ পড়ে যান। আমি নিজের সাফল্য নিয়ে বেশি উপভোগ করতে পারিনি। বরং ড্রেসিংরুমে ফিরে চেষ্টা করেছি কিভাবে আরও শাণিত হওয়া যায়। আমার বিরুদ্ধে কেউ সফল হলে চেষ্টা করেছি তাঁকে পরের ম্যাচে কীভাবে দ্রুত ফেরানো যায়, তাই নিয়ে। তাই আনন্দ করা হয়নি আমার।" অশ্বিনের কেরিয়ার স্ট্যাট কিংবদন্তির কাহিনী শোনালেও আমাদের কোনদিন বীরগাথা লেখা হয়নি তাঁকে নিয়ে। একজন নীরব সৈনিক হিসেবে রয়ে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটের মহাকাব্যে।
এভাবেই একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজের মাঝেই। তরুণ প্রতিভাদের জন্য ছেড়ে দিয়ে গেলেন তাঁর সিংহাসন। একজন একজন নিরহংকারী রাজার মত। মোহ হীন সম্রাটের মত।
মুকুটটা তো পড়েই আছে
কাল থেকে রাজাই শুধু নেই