ছারখার অজি ব্যাটিং। অশ্বিন-বুমরাহের দাপুটে বোলিংয়ে অ্যাডিলেডে টেস্টে ফিরল টিম ইন্ডিয়া। বিস্তারিত পড়ুন...

এক্সট্রা টাইম নিউজ ডেস্ক : 'এভাবেও ফিরে আসা যায়'। এই প্রবাদকে অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করল টিম ইন্ডিয়া। মূলত বোলারদের দাপটেই অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে চালকের আসনে বিরাট বাহিনী। দ্বিতীয়দিনের সকালে ভারতের প্রথম ইনিংস মাত্র ২৪৪ রানে গুটিয়ে গেলেও, পাল্টা লড়াই শুরু করেন জসপ্রীত বুমরাহ ও উমেশ যাদব। তবে পিঙ্ক বলে এদিন অজি ব্যাটিং'কে চমকে দিলেন অভিজ্ঞ অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এই তিন বোলারের দাপটে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। ফলে ৫৩ রানে মূল্যবান লিড পেয়েছিল 'মেন ইন ব্লু' ব্রিগেড।
যদিও একাধিক ক্যাচ না ফস্কালে ও বিপক্ষের অধিনায়ক টিম পেইন অপরাজিত ৭৩ রানের লড়াকু ইনিংস না খেললে, ভারতের লিড নিঃসন্দেহে বাড়ত। তবে এমন মোক্ষম সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পুরোপুরি ব্যর্থ পৃথ্বী শাহ (৪)। প্রথম ইনিংসের মত এবারও দ্রুত সাজঘরে ফিরলেন এই ওপেনার। বোল্ড হওয়ার ধরণ একই রকম। ব্যাট ও প্যাডের মাঝে বিশাল ফাঁক দেখা গেল। লাবুশান যখন মাত্র ১ রানে ক্রিজে ব্যাট করছেন, তখন বুমরাহের বলে সহজ ক্যাচ ফস্কান স্কোয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা এই পৃথ্বী। সেটা শোধরানোর সুযোগ পেলেও, কাজে লাগাতে পারলেন না এই মুম্বইকর। টেকনিক নিয়ে না ভাবলে যে দলকে ভুগতে হবে। সেটা টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝুক। আর তাছাড়া সাজঘরে কে এল রাহুল ও শুভমান গিলের মত ব্যাটসম্যান বসে আছেন। কয়েকদিন পরেই দলে রোহিত শর্মা যোগ দেবেন। তাই পৃথ্বী যদি নিজের 'ওয়ার্ক এথিক্স' না শোধরান, তাহলে তাঁর টেস্ট কেরিয়ার অনিশ্চিত হতে পারে।
শুরুতেই পৃথ্বীর উইকেট হারালেও দিনের শেষে ভারত ১ উইকেটের বিনিময়ে ৯ রান তুলেছে। ক্রিজে রয়েছেন ময়ঙ্ক ও বুমরাহ। দুই ইনিংস মিলিয়ে ভারত এগিয়ে ৬২ রানে। এদিনের খেলা শুরু হতেই দ্রুত প্রথম ইনিংসের শেষ চার উইকেট পড়ে যায় ভারতের। আগের দিনের রানের সঙ্গে মাত্র ১১ রান যোগ করতে সক্ষম হয় টিম ইন্ডিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও ভাল হয়নি। দ্রুত ফিরে যান দুই ওপেনার ওয়েড (৮) এবং বার্নস (৮)। দু’জনকেই ফেরান 'বুম বুম' বুমরাহ।
এরপর রান না হলেও উইকেটের পতন রুখতে ক্রিজ আঁকড়ে ব্যাটিং করতে থাকেন স্টিভ স্মিথ ও মার্নস লাবুশান। এই সময় বেশ কয়েকটি ক্যাচও ফেলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। নাহলে এই জুটিও ভেঙে যেত। শেষপর্যন্ত অবশ্য কাজের কাজটি করেন অশ্বিন। স্মিথের (১) গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নেন তিনিই। এরপর ট্রেভিস হেড (৭) এবং ক্যামেরন গ্রিনকেও (১১) ফেরান তিনি। গ্রিনকে আউট করার সময় তাঁর বলে দুরন্ত ক্যাচ নেন বিরাট। এরপর লাবুশান (৪৭) এবং কামিন্সকে আউট করেন উমেশ।
১১১ রানে সাত উইকেট পড়ে গেলেও সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার রান পৌঁছে যায় ১৯১ পর্যন্ত। সৌজন্যে টিম পেইন। বোলারদের সঙ্গে নিয়েই ধীরে ধীরে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। শেষপর্যন্ত ৭৩ রানে অপরাজিতও ছিলেন। একাধিক ক্যাচ ফেলার কারণেই এতটা দূরে যায় অজিদের ইনিংস। অশ্বিন ৫৫ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ৪০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন উমেশ। বুমরাহের দখলে এসেছে ৫২ রানের ২ উইকেট।
তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৬ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পান ময়ঙ্করা। তবে তাতেই পৃথ্বীর উইকেটের পতন ঘটে। প্রথম ইনিংসে শূন্য করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন মাত্র চার রান। শেষপর্যন্ত দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের রান ছিল ৯/১। ক্রিজে ময়ঙ্ক (৫*) এবং নাইট ওয়াচম্যান বুমরাহ (০*)। দুই ইনিংস মিলিয়ে বিরাটরা এগিয়ে ৬২ রানে। শনিবার যদি ভারত ধৈর্য ধরে ব্যাট করে, তাহলে বিদেশের মাটিতে প্রথমবার পিঙ্ক বল টেস্ট খেলতে নেমেই জিততে পারে টিম ইন্ডিয়া।
দ্বিতীয় দিনের স্কোরবোর্ড :
ভারত (প্রথম ইনিংস) : ৯৩.১ ওভারে ২৪৪/১০ (বিরাট ৭৪, স্টার্ক ৪/৫৩)
অস্ট্রেলিয়া (প্রথম ইনিংস) : ৭২.১ ওভারে ১৯১/১০ (পেইন ৭৩*, অশ্বিন ৪/৫৫)
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস) : ৬ ওভারে ৯/১ (ময়ঙ্ক ৫*, কামিন্স ১/৬)
ভারত এগিয়ে ৬২ রানে।