প্রয়াত যশপাল শর্মা! জানুন ভারতের সংকটের নায়কের এই পাঁচটি বিশেষ কাহিনী

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : প্রয়াত হলেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী তারকা ক্রিকেটার যশপাল শর্মা। সুনীল গাভাস্কার-কপিল দেবের টিম ইন্ডিয়ায় যশপাল শর্মা অত্যন্ত বড় ভূমিকা রেখেছেন ১৯৭৯-১৯৮৫ সালের সময়কালে। ভারতের হয়ে সংকটের নায়ক হিসেবে উঠে এসেছিলেন এই তারকা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
৬৬ বছর বয়সী এই দুরন্ত প্রাক্তন ক্রিকেটারের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য রেখে আমরা এমন পাঁচটি অজানা ও অভূতপূর্ব তথ্য জানব, যা যশপাল শর্মার ভারতীয় দলে প্রকৃত গুরুত্ব এবং মনুষ্যত্ব বোঝাবে।
১. টিম ইন্ডিয়ার ক্রাইসিস ম্যান -
টিম ইন্ডিয়ার ক্রাইসিস ম্যান হিসেবে বিবেচিত ছিলেন যশপাল শর্মা। আর এই নাম দিয়েছিলেন সুনীল গাভাস্কার। দীর্ঘ সময় ধরে একসাথে দেশের হয়ে খেলেছেন সুনীল ও যশপাল। যশপালের সম্বন্ধে গাভাস্কার বলেছিলেন, সত্যিকারের চ্যালেঞ্জই যশপালের মধ্যেকার সেরাটা নিয়ে আসে, যিনি চাপের মধ্যে উঠে আসতেন।
২. শুরুর দিনগুলিতেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন -
কেরিয়ারের শুরুতেই ঘরোয়া ও স্কুল ক্রিকেটে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন যশপাল। ১৯৭২ সালে পাঞ্জাব স্কুলের হয়ে জম্মু ও কাশ্মীর স্কুলের বিরুদ্ধে যশপাল দুরন্ত ২৬০ রানের ইনিংস খেলেন। ১৯৭৩ সালে পাঞ্জাবের হয়ে নিজের রঞ্জি অভিষেকে সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০ রানের ইনিংস খেলেন যশপাল। সেই ম্যাচে মহিন্দর অমরনাথের সাথে ১৬৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন যশপাল।
এরপর ১৯৭৭ সালে দলীপ ট্রফির সেমি ফাইনালে নর্থ জোনের হয়ে সাউথ জোনের বিরুদ্ধে পাঁচ ঘন্টা ব্যাট করে ১৭৩ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন যশপাল। সেই সাউথ জোন টিমে ছিলেন আবিদ আলি, এরাবল্লী প্রসন্ন এবং ভগবত চন্দ্রশেখরের মত ভারতসেরা বোলাররা।
৩. সুযোগ না পেয়েও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করেন যশপাল -
ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করা সত্ত্বেও জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না যশপাল। আর তাই নির্বাচকদের প্রমাণ করার জন্য আরও রান করে গেলেন যশপাল। ১৯৭৮ সালের মরশুমে ৭৬২ রান করে বছরের সেরা ভারতীয় ক্রিকেটের পুরষ্কার পান।
এরপর ১৯৭৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে নর্থ জোনের হয়ে অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংস খেলেন যশপাল। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন ভ্যানবার্ন হোল্ডার ও ম্যালকম মার্শালের মত পেসাররা। তার পরের ম্যাচে ওয়েস্ট জোনকে হারিয়ে নর্থ জোনকে দলীপ ট্রফি জেতান যশপাল। সুনীল গাভাস্কার, অংশুমান গায়কোয়াড়, দীলিপ বেঙ্গসরকার, কারসন ঘাউড়ির মত তারকাসমৃদ্ধ ওয়েস্ট জোনের বিরুদ্ধে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন যশপাল।
৪. ১৯৮৩ বিশ্বকাপের অন্যতম বড় মসীহা -
স্মরণীয় ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম বড় কৃতিত্ব যাওয়া উচিত যশপাল শর্মার। প্রকৃত ক্রাইসিস ম্যানের মতই বিশ্বকাপে নিজের ভূমিকা পালন করেন যশপাল। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই ভারতের ১৪১ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেখানে যশপাল ১২০ বলে ৮৯ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসী ৪০ ও সেমি ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়াকু ৬১ রানের ইনিংস ভারতের পক্ষে অসাধারণ কাজ করেছিল।
৫. নির্বাচক পদে থেকে চ্যাপেল জমানায় সৌরভকে সমর্থন করে গিয়েছেন যশপাল -
বরাবরই স্পষ্টবক্তা হিসেবে পরিচিত যশপাল শর্মা। অবসরের পরেও ক্রিকেটের ময়দানে প্রকৃত সত্যকে সামনে আনতে চেয়েছেন যশপাল। ২০০৩-২০০৬ সালে জাতীয় দলের নির্বাচক ছিলেন যশপাল। নির্বাচক থাকাকালীন তিনি দেখেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি ও গ্রেগ চ্যাপেলের মধ্যেকার কাজিয়া।
সেই সময় খুব কম ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন যশপাল, যিনি কর্তৃত্বে থেকে সরাসরি সৌরভকে সমর্থন করে গিয়েছেন, এবং নির্বাচক পদে থেকে কোচ গ্রেগের বিরোধিতা করে গিয়েছেন। এরপর ফের ২০০৮ সালে নির্বাচক হিসেবে ফিরে আসেন যশপাল।