হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন সত্যজিৎ ঘোষ। আবেগপ্রবণ সুব্রত ভট্টাচার্য। বিস্তারিত পড়ুন...

নিজস্ব প্রতিনিধি : মাত্র ৬২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করলেন আশির দশকের তারকা ডিফেন্ডার সত্যজিৎ ঘোষ। গত এক সপ্তাহ ধরে সর্দি-কাশি'তে ভুগছিলেন। কিন্তু এই সামান্য সর্দি-কাশি যে তাঁর জীবনে কাল হয়ে আসবে সেটা কে জানত! এই সামান্য সর্দি-কাশির জন্য রবিবার মাঝরাতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তারপর ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুর নিবাসী প্রাক্তন ফুটবলারকে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়, পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রেখে গেলেন স্ত্রী ও একমাত্র বিবাহিত কন্যাকে।
স্বভাবতই প্রিয় সতীর্থের প্রয়াণ মেনে নিতে পারছেন না সুব্রত ভট্টাচার্য ও তনুময় বসু। ১৯৮০ সালে ফুটবল কেরিয়ার রেলওয়ে এফসি থেকে শুরু করলেও, ময়দান তাঁকে মোহনবাগানের 'ঘরের ছেলে' হিসেবেই জানে। ১৯৮২ সালে তিনি সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে চাপান। তারপর ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সুব্রত ভট্টাচার্যের সঙ্গে বাগানের ডিফেন্স আগলেছেন। তবে চোট-আঘাত তাঁর কেরিয়ারের অনেকটা অংশ জুড়ে থাবা বসিয়েছিল। যদিও হাঁটুর চোট সারিয়ে আবার ১৯৮৯ সালে সবুজ-মেরুন তাঁবুতে ফিরে আসেন সত্যজিৎ। খেললেন ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত।
সদ্য প্রয়াত সত্যজিতের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সুব্রত ভট্টাচার্য বলছিলেন, "আমি কেরিয়ারে একাধিক ডিফেন্ডারদের সঙ্গে ও বিপক্ষে খেলেছি। তবে তাদের মধ্যে সত্যজিৎ হল সেরা। ওর মত মাথা ঠান্ডা রেখে ফুটবল খেলতে আর কাউকে দেখিনি। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে ও থাকলে বাড়তি ভরসা পেতাম। ওর মাথা ছিল বরফের মত ঠান্ডা। আর তাই কোনওদিন ফালতু ট্যাকেল করে কার্ড দেখেনি। ও সামনে রেখে আমি পিছন থেকে ডিফেন্স সামলেছি। এটাই ছিল আমাদের স্ট্রাটেজি।" এতো গেল ফুটবলার সত্যজিতের কথা। মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন তিনি? ময়দানের বাবলুর সংযোজন, "মাঠের বাইরে ও ড্রেসিংরুমে আমি সবার সাথে ইয়ার্কি মারতাম। সত্যজিত'ও রেহাই পেত না। কিন্তু কোনওদিন রাগতে দেখিনি। কোনওদিন কাউকে কটূক্তি করেনি। বরং বন্ধুরা বিপদে পড়লেই সাহায্যের জন্য ছুটে যেত। ওর মত মানুষ পাওয়া আজকের যুগে বিরল।"
সুব্রত'র মতই বন্ধুর প্রয়াণে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন তনুময় বসু। বলছিলেন, "আমরা দুজনেই হুগলি জেলা থেকে উঠে এসেছি। ময়দানে একসঙ্গে ফুটবল কেরিয়ার শুরু করলেও, সত্যজিৎ কিন্তু মোহনবাগানে আমার চেয়ে সিনিয়র। ও, কৃষানু একসঙ্গে মোহনবাগানে খেলত। ১৯৮৩ সালে আমি মোহনবাগানে এলাম। ততদিনে সত্যজিৎ আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছে। আসলে ওর মত ডিফেন্ডার সামনে থাকলে গোলকিপার অনেকটা নিশ্চিত থাকে। আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল।" এরপরেই যোগ করলেন, "কিন্তু ১৯৮৬ সালে কলকাতা লিগের একটা ম্যাচে হাঁটুর চোট ওর কেরিয়ারের সর্বনাশ করল। সেই চোট সারিয়ে ১৯৮৯ সালে ফের কামব্যাক করলেও, ওর খেলার মধ্যে পুরোনো মেজাজ ছিল না।"
সুব্রত-তনুময়ের মত একইরকম আবেগপ্রবণ অনীত ঘোষ। শুধু তো আবেগপ্রবণ নয়। লেখা ভাল নস্টালজিক হয়ে পড়লেন দুই প্রধানে খেলা ফুটবলার। বলছিলেন, "আমাদের কাছে সত্যজিৎ দা হিরো ছিলেন। ওনার কাছ থেকে ভারতীয় দলের জার্সি-মোজা উপহার পেয়েছিলাম। সেগুলো এখনও আগলে রাখা আছে। ছোটবেলায় ওনার দেখা পাওয়ার জন্য একাধিক জায়গায় চলে যেতাম। কয়েকদিন পরেই ওনার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। আমার এক বন্ধুর সঙ্গে সেই আলোচনা করছিলাম। অথচ দেখুন আজ সকালে ওর কাছ থেকেই এমন মর্মান্তিক খবর পেলাম। সত্যি বলতে কিছু ভাল লাগছে না। চোখের সামনে ছেলেবেলার দিনগুলো বারবার ভেসে উঠছে।"
করোনা পরবর্তী সময় হুগলি জেলা সংস্থায় অফিসে সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকটা ঘন্টা সব হিসেব-নিকেশ বদলে দিল। যা মেনে নিতে পারছেন না সুব্রত-তনুময়ের মত সতীর্থরা।