এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপের দৌড়ে ভারত: প্রথমার্ধে উন্নতির লক্ষ্য রাখছেন কোচ ক্রিসপিন ছেত্রী

Photo- AIFF
এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ ২০২৬ কোয়ালিফায়ার্সের গ্রুপ বি এখন কার্যত ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যেই রূপ নিয়েছে। ম্যাচডে ৩-এর পর দুই দলই ৬ পয়েন্টে রয়েছে, তবে গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় দল ‘ব্লু টাইগ্রেসেস’।
গ্রুপের একমাত্র শীর্ষ দলই পাবে অস্ট্রেলিয়ার টিকিট। ভারত ইতিমধ্যেই টিমোর-লেস্তে (৪-০) ও মঙ্গোলিয়াকে (১৩-০) হারিয়ে ফেলেছে, যে দুটি দল ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়েছে। থাইল্যান্ডের কাছে ০-৭ হেরে একেবারে ছিটকে যাওয়ার মুখে রয়েছে ইরাক। আগামী ২ জুলাই ভারতের বিরুদ্ধে না জিতলে তারাও বিদায় নেবে। আর তাতে ৫ জুলাই ভারত বনাম থাইল্যান্ড ম্যাচ হয়ে উঠবে সরাসরি কোয়ালিফিকেশন প্লে-অফ। তার আগে পর্যন্ত, দুই দলই সর্বোচ্চ গোলসংখ্যা ও পয়েন্ট তোলার দৌড়ে রয়েছে। ভারতের গোল পার্থক্য এখন +১৭, থাইল্যান্ডের +১১। ভারতের ইরাক ম্যাচ বুধবার দুপুরে, আর থাইল্যান্ড সেদিনই সন্ধ্যায় খেলবে মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে।
টিমোর-লেস্তের বিরুদ্ধে জয়ের পর ভারতীয় কোচ ক্রিসপিন ছেত্রী জানিয়েছেন, তিনি জয় নিয়ে খুশি হলেও প্রথমার্ধে দলের ধীরগতিতে কিছুটা চিন্তিত। তিনি বলেন, “জয় তো মধুর, তবে আমরা প্রথমার্ধে আরও ভালো করতে পারতাম। ম্যাচের শুরু থেকেই ফোকাস থাকা জরুরি, শুধু দ্বিতীয়ার্ধেই ভালো খেললেই হবে না। তবে সামগ্রিকভাবে ফলাফলে আমি খুশি।”
ভারতের করা ১৭ গোলের মধ্যে ১২টিই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে। যদিও দুটি ম্যাচেই দল প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যায়, মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে ৮ মিনিটে ও টিমোর-লেস্তের বিরুদ্ধে ১২ মিনিটে, তবু প্রথমার্ধে ছন্দ খুঁজে পেতে দেরি করছে দল। ছেত্রীর মতে, “যত তাড়াতাড়ি গোল আসে, তত দ্রুত দল ছন্দে আসে। আমরা একটু দেরি করে ছন্দে ঢুকছি। প্রথমার্ধে শুধু সুযোগ নষ্ট করছি না, প্রতিক্রিয়াও ধীর, ফলোআপও দুর্বল। এটা ঠিক করতে হবে।”
তবে ইতিবাচক দিকও আছে — বেঞ্চ থেকে নামা খেলোয়াড়রা দারুণ প্রভাব ফেলছেন। লিন্ডা কোম সের্তো, মালবিকা পি ও প্রিয়ধর্শিনী সেল্লাদুরাই বেঞ্চ থেকে নেমে গোল করেছেন। কোচ ছেত্রীর প্রিয় গোল ছিল চতুর্থটি, যেটি লিন্ডা ও গ্রেস ডাংমেইর যুগলবন্দীতে তৈরি। গ্রেস ডান প্রান্ত ধরে ছুটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাইলাইনের কাছ থেকে বল বাড়ান লিন্ডার জন্য, যিনি সহজে লক্ষ্যভেদ করেন। এটাই লিন্ডার প্রথম অফিসিয়াল আন্তর্জাতিক গোল।
“আমরা নানা কম্বিনেশন নিয়ে পরীক্ষা করছি। আগেরবার গ্রেস ও প্যারি, এবার শুরু করেছিলাম অঞ্জু ও প্যারি দিয়ে, পরে নামল লিন্ডা ও গ্রেস। পরিস্থিতির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে। বেঞ্চ দারুণ খেলেছে। অঞ্জু চোট কাটিয়ে ফিরেছে এবং ৮০ মিনিট খেলেছে, এটা ভালো ইঙ্গিত,” বলেন ছেত্রী।
অঞ্জুর মতোই মানিশা কাল্যাণও কোয়ালিফায়ার্সে প্রথমবার মাঠে নামলেন। দুটি অর্ধে দুটি গোল করলেন তিনি। ফেব্রুয়ারির পর এই প্রথম ভারত দলে মূল একাদশে শুরু করলেন মনিশা। গত মাসে উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে তাকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন কোচ, কারণ গ্রিসের ক্লাব PAOK-এ লম্বা মরশুম শেষে কিছুটা বিশ্রাম দরকার ছিল।
“মনিশা দুটি দারুণ গোল করেছে, তবে আমি জানি সে আরও ভালো খেলতে পারে। ওর মরসুমটা ছিল দীর্ঘ, এবং ইউরোপে সে ভিন্ন ভূমিকায় খেলে — ফুল-ব্যাক হিসাবে। এখানে উইংয়ে খেলছে, তাই মানিয়ে নিচ্ছে এখনও। তবু আজ ভালোই খেলেছে।”
১৩তম আন্তর্জাতিক গোলের পর মনিশা বলেন, “দলের হয়ে গোল করতে পেরে ভালো লাগছে। এই জয়ে আগামী দুই ম্যাচের জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়ল। আমরা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করার।”
তবে জয়ের দিনে বড় ধাক্কা এসেছে সৌম্য গুগুলোথের চোটে। ভারতের বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলার টিমোর-লেস্তের ডিফেন্ডার ইডালিয়া আলভেস বেলোর সঙ্গে সংঘর্ষে নাসার হাড়ে চোট পান। রবিবার রাতেই অস্ত্রোপচার হয়, সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং ফিরে আসেন দলের হোটেলে। সেখানেই চলবে তাঁর পুনর্বাসন।
“সৌম্যার না থাকা বড় ক্ষতি। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ও যেন দ্রুত ফিরে আসে, সেটাই চাই। তবে আমাদের বেঞ্চ যথেষ্ট শক্তিশালী, আশা করি সামলাতে পারব,” বললেন ছেত্রী।