একে অপরের ফ্যান ছিলেন শচীন ও জাকির

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক: দুই কিংবদন্তি দেশের সম্মান গোটা পৃথিবীর কাছে উজ্জ্বল করেছেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন জগৎ দুজনের। কিন্তু একে অপরের প্রতি কী নিবিড় শ্রদ্ধা। আচ্ছা তাঁরা যখন একত্রিত হন, তখন কী হয়? কী কথা হত দুজনের। কীভাবে একজন তবলা কিংবদন্তির তাল একজন ক্রিকেট জিনিয়াসের দক্ষতার সঙ্গে মিশে জুটিতে লুটি হয়ে উঠল, একে অপরের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠল? উস্তাদ জাকির হুসেন এবং শচীন তেন্ডুলকারের বন্ধুত্ব এই প্রশ্নগুলোর সুন্দর উত্তর দিয়েছে—তাঁদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সম্মান, এক নতুন কাহিনীর জন্ম দিয়েছে।
উস্তাদ জাকির হুসেন, তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় জাদুকরী তালের মাধ্যমে বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন। অথচ ছোটবেলায় তিনি ক্রিকেটের প্রতিও গভীর ভালোবাসা অনুভব করতেন। অনেক বাচ্চার মতো জাকির হোসেন যখন ছোট, তিনিও গলিতে ক্রিকেট খেলতেন অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে। এমনকি তবলা অনুশীলন না করে গলিতে ছুটে যেতেন। ক্রিকেটের প্রতি ছিল অবাধ টান। এই টান পরে যে তানে পরিণত হবে, অদৃষ্ট বুঝি জানত। তাঁর বাবা, কিংবদন্তি উস্তাদ আল্লারাখা, তাঁর ছেলের সঙ্গীত প্রতিভা বুঝতে পেরে তাঁকে ক্রিকেটের পরিবর্তে তবলা বেছে নিতে বলেন। আসলে তখন রক্ত কথা বলছিল একটু একটু করে। একবার ক্রিকেট খেলার সময় আঙুল ভেঙে যাওয়া ছিল সেই মোড় পরিবর্তনের সময়। যখন আল্লারাখা জাকিরকে সঙ্গীতের দিকে নিয়ে যান—এমন একটি সিদ্ধান্ত যা তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সেরা তবলা বাদক বানিয়ে তুলেছিল। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে যে আঙুল ভেঙেছিল। সেই আঙ্গুলের কথা শুনেছে গোটা বিশ্ব। বাহ উস্তাদ বলেছে দুনিয়া।
যদিও ক্রিকেট ছেড়ে দিতে হয়েছিল, জাকির হুসেনের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা অটুট ছিল। প্রচুর খেলা দেখতেন। একদিকে তবলার বোলে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছিলেন কিংবদন্তি। অন্যদিকে শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেটের বিশ্ব হয়ে উঠেছিলেন। বছরের পর বছর ধরে, তিনি ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন তেন্ডুলকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন জাকির হুসেন। শচীন জাকিরের শিল্পকলার প্রশংসা করতেন, ঠিক তেমনি জাকির শচীনের প্রতিভার ফ্যান ছিলেন। ১৫ই ডিসেম্বর জাকিরের প্রয়াণের পর, শচীন হৃদয়স্পর্শী শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছিলেন, “পর্দা নেমে গেছে, কিন্তু তালের ধ্বনি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হবে।” দুই কিংবদন্তি, দুই শিল্প এবং এক সুন্দর সংযোগ—ঐতিহ্য ও বন্ধুত্ব একটি চিরন্তন অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে থাকল।