সাপ্লাইলাইন: প্রিমিয়ার লিগ ও ভূমিপুত্র

রণজিৎ দাশঃ বাংলা থেকে ভারতীয় অনূর্ধ-২৩ ফুটবল দলের প্রস্ততি ক্যাম্পে নতুন দু'জন ফুটবলারের ডাক পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যাটা হয়তোবা আরও বাড়তে পারে। এআইএফএ থেকে সম্পূর্ন তালিকা এখনও প্রকাশ হয়নি।ইউনাইটেড স্পোর্টস ও পাঠচক্রের দু'জন ফুটবলারের নাম খবরে এসেছে। সম্পূর্ন তালিকা প্রকাশের আগে কেবল ইউনাইটেড স্পোর্টস ও পাঠচক্রের দুজন ফুটবলারের নাম নিয়ে কেবল চর্চা হচ্ছে।আশাকরা যায়, ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ক্লাবের কিছু বাঙালি ফুটবলারও ডাক পেতে পারে। এর আগের প্রস্ততি ক্যাম্পে মোহনবাগানের দীপেন্দু বিশ্বাস ও ইষ্টবেঙ্গলের সুমন দে ডাক পেয়েছিল। ভারতীয় দলের তাজিকিস্হানের সফরে দীপেন্দু বিশ্বাসের স্হান হলেও,দল থেকে সুমন দে বাদ যায়। ২রা আগষ্ট থেকে ব্যাঙ্গালুরুতে হতে যাওয়া ক্যাম্পে আর কোন কোন নতুন বাঙালি ফুটবলার ডাক পেল,তার কৌতূহল থাকছে।
ইউনাইটেড স্পোর্টসের সাহিল হরিজনদের ডাক পাওয়াটা প্রত্যাশিত ছিল। আইলিগের দ্ধিতীয় বিভাগের গত দু'বছর ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে সাহিল হরিজন নিয়মিত গোলের মধ্যে ছিল। ফলে তার ডাক পাওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা বলা যায়। কিন্ত পাঠচক্রের গোলকিপার অর্নব দাসের ভারতীয় দলের সুযোগ পাওয়াটা উল্লেখযোগ্য উদাহরন হয়ে রইলো। লোকাল লিগের ৪টে ম্যাচের পারফরম্যান্সে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ঘটনা অতীতে শেষ কবে ঘটেছে,তথ্য পাওয়া দুস্কর।
দেশের অনূর্ধ-২৩ ফুটবল দল মানেই পরবর্তী পর্যায়ে ভারতীয় সিনিয়র দলের জায়গা করে নেওয়ার প্লার্টফর্ম। এই অনূর্ধ-২৩ দলে সাধারনত: বয়সভিত্তিক অনূর্ধ-১৬ থেকে অনূর্ধ-২০, ভারতীয় দলের ফুটবলারেরা ধাপে ধাপে উঠে আসে। বর্তমান সময়ে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন অনূর্ধ-২৩ ডেভলপমেন্ট লিগের মূলপর্বের দল থেকেও অনেক ফুটবলার এই দলে ডাক পেয়েছেন। যেমন,মোহনবাগান ক্লাবের গোলকিপার প্রিয়াংশ পান্ডে, ডেভলপমেন্ট লিগের দারুন পারফরম্যান্স করেছে।যদিওবা প্রিয়াংশ পান্ডে অনূর্ধ-২০ ভারতীয় দলেও খেলেছে। আবার এবছর অনূর্ধ-১৯ সাফ কাপে চ্যাম্পিয়ান ভারতীয় দলের গোলকিপার সুরজ সিং,অনূর্ধ-২৩ দলে সুযোগ পেয়েছে। কিন্ত সর্বভারতীয় স্তরে পারফরম্যান্স ছাড়া কেবল লোকাল লিগের ৪টে ম্যাচের পারফরম্যান্সে ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ার নজির বিরল বলা যায়। পাঠচক্রের গোলকিপার অর্নব দাসের এই সুযোগ পাওয়াটা অন্যান ফুটবলারদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো।
অর্নব দাসের ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলার মিডিয়া ও ভারতীয় দলের ডিরেক্টর বাংলার সুব্রত পালের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবেনা। অর্নবের ইষ্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মাঠের ভিতর ও মাঠের বাইরের খেলোয়াড়ি স্কিল এবং মানসিকতাকে বাংলার মিডিয়া সর্বভারতীয় স্তরে দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হয়েছে। ইষ্টবেঙ্গলের সুমন দে এর আগের ক্যাম্পে ডাক পেয়েও বাদ পড়েছিল। অর্ণব দাসকে সর্তক থাকতে হবে। ক্যাম্পের প্রতিটি সেশন তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্ণব দাসের ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ার ঘটনাই আমাদের কলকাতা লিগের গুরুত্বকে স্মরন করিয়ে দিল। কলকাতা লিগ ও ভূমিপুত্রদের লড়াইয়ের সার্থকতা একে মান্যতা দেয়।বাংলা জুড়ে অবৈধ্য বিদেশি ফুটবলারদের খেপের মাঠে দাপাদাপি চলছে। এদিকে পাল্লা দিয়ে কলকাতা লিগের ৮/৯টা গড় ম্যাচের প্রাপ্ত সুযোগের মাঝে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের থাবা পড়েছে। এমন সন্ধিক্ষণে লোকাল লিগ খেলে ভারতীয় দলে অর্ণবের সুযোগ পাওয়া গর্বের। প্রসঙ্গত বলা যায় বাংলা দল এবার সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। সেই চ্যাম্পিয়ান দলের কোনো উল্লেখযোগ্য ফুটবলার অনূর্ধ-২৩ ভারতীয় দলে ডাক পায়নি। যদিও,রবি হাঁসদা ও রবিলাল মান্ডিরা ২৩বছর পার করে ফেলেছে। সন্তোষ জয়ী বাংলা দলে সাকুল্যে ২জন অনূর্ধ-২৩র ফুটবলার ছিল। কিন্ত তারা দলের নিয়মিত ফুটবলার ছিলনা।বাংলা দল গঠনে এদিকে নজর দেওয়া দরকার।
সাহিল হরিজনের উঠে আসার ক্ষেত্রেও কলকাতা লিগের গুরুত্ব প্রাধান্য পাবে। মাত্র ৩বছর আগে সাহিল হরিজন কলকাতা লিগে পাঠচক্রের হয়ে খেলা শুরু করে। পাঠচক্র দল সেই মরশুমে কলকাতা লিগ টেবিলে ভালো জায়গায় না থাকলেও, সাহিল হরিজন লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়। এবং তার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে আইলিগের দ্ধিতীয় বিভাগে খেলার সুযোগ মেলে। এবং সে আইলিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় দ্ধিতীয় হয়।সাহিল হরিজন মাত্র ৬বছরে বয়সে অশোকনগরের কোচ সুরজিৎ দাসের কাছে ফুটবল খেলা শুরু করে। অশোক নগরের কোচ সুরিজিৎ দাস প্রাক্তন ফুটবলার এবং ময়দানে ও ফুটবল মহলে তিনি পলদা নামে পরিচিত। পলদার অশোক নগরের কোচিং ক্যাম্প ফুটবলারদের মহলে বেশ পরিচিত নাম। সাহিল হরিজন এই ক্যাম্প থেকেই খেলা শুরু করে এবং পরবর্তী সময়ে এটিকের জুনিয়র দলে খেলার সুযোগ পায়।কোভিড মহামারির জন্য তার ফুটবলের অগ্রগতি ধাক্কা খায়। এদিকে একনজরে তখন সাহিল হরিজনের চেহারা প্রাথমিক আকর্ষনের অন্তরায় হয়ে যায়।সাধারনত: ফুটবল মহলে পলদার অশোকনগর ফুটবল কোচিং ক্যাম্পের ফুটবলারদের বেশ কদর আছে। এই ক্যাম্পের ফুটবলারদের বেসিক স্কিল ভালো হয়ে থাকে।ইউনাইটেড স্পোর্টসের দলে সাহিলের খেলা আরও উন্নত হয়েছে।
কলকাতা প্রিমিয়র লিগ শুরুর আগে এবার বাঙালি ফুটবলার তুলে আনার ক্ষেত্রে ভূমিপুত্রদের সুযোগ করে দেওয়া নিয়ে বিস্তর টালবাহানা হয়। আইএফএ একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিজেদের সিদ্ধান্তে পিছপা হয়। সেসময় যারা ভূমিপুত্রদের খেলানোর বাধ্যবাধকতায় লিগের মান পড়ে যাওয়া নিয়ে আশাঙ্খা প্রকাশ করেছিলেন,আজ সাহিল ও অর্ণবদের ভারতীয় দলের সুযোগ পাওয়া নিয়ে তাদের ভিন্ন ভূমিকায় বক্তব্য রাখতে শোনা যাচ্ছে।
সিনিয়র ভারতীয় দলে বাঙালি ফুটবলার শূন্য হলেও,বয়সভিত্তিক ভারতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারদের ডাক পাওয়া ইতিবাচক ঘটনা বলা যায়। ভূমিপুত্রদের দাবি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এবার কলকাতা লিগে ব্যাপকহারে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় এসেছে।