আই লিগ ফের শুরু হওয়া ও ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল খেলা নিয়ে কী বললেন ফেডারেশন সচিব কুশল দাস?

গোপাল রায়: সারা বিশ্বে এখন এক অস্থির অবস্থা। সেই অবস্থার বাইরে নয় ভারতবর্ষও। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থমকে যাওয়া আই লিগ কি ফের শুরু করা সম্ভব? বা এই পরিস্থিতিতে আগামী মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল খেলার সম্ভাবনাই বা কতটা? এই সব নিয়েই এক্সট্রাটাইমকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সচিব কুশল দাস।
প্রশ্ন: যা পরিস্থিতি তাতে কি আদৌ আই লিগ ফের শুরু করা সম্ভব?
কুশল: দেখুন, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এটা বলা মুশকিল। কেন্দ্রীয় সরকার ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লক ডাউন ঘোষণা করেছে। এরপর লকডাউনের সময়সীমা বাড়বে কিনা জানি না। যদি লক ডাউন শিথিল হয়, তখন নয় লিগ কমিটির সভা ডেকে আলোচনা করা হবে।
প্রশ্ন: সেক্ষেত্রে এখন উপায় কী?
কুশল: উপায় আর কী, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা ছাড়া। আর তাছাড়া তো আই লিগে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। সেটা এএফসি তো মোহনবাগান ও আমাদেরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েও দিয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু এই নিয়ে তো ইস্টবেঙ্গল এএফসিকে জানিয়েছে। পরীক্ষা শেষ হল না, অথচ ফার্স্ট বয় ঘোষণা হয়ে গেল?
কুশল: ইস্টবেঙ্গল এটা কী ভেবে বলছে জানি না। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টা প্রযোজ্য নয়। তার কারণ মোহনবাগান কিন্তু চারটে পেপার বাকি থাকতেই ফার্স্ট হয়ে গেছে। বাকি পরীক্ষার্থীদের থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। বাকি পরীক্ষার্থীরা চেষ্টা করলেও আর ফার্স্ট বয়কে ছুঁতে পারবে না।
প্রশ্ন: সে তো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও তাই। অন্যান্য স্টুডেন্টের থেকে অনেক এগিয়ে লিভারপুল। এই মুহূর্তে লিগ টেবিলে ওরাই ফার্স্ট বয়। সেখানেও কিন্তু আই লিগের মতো ওখানকার লিগ বন্ধ। একই কারণে। কই ওদের তো লিভারপুলকে ফার্স্ট বয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি?
কুশল: দেখুন এই তুলনাটা যারা করছেন, তারা ভুল করছেন। তার কারণ মোহনবাগান কিন্তু অঙ্কের বিচারে চ্যাম্পিয়ন। লিভারপুল কিন্তু নয়।
প্রশ্ন: সে তো নয় বুঝলাম। কিন্তু লিগের দ্বিতীয়, তৃতীয় বা লাস্ট বয় কে? কারণ আই লিগে তো ওঠা-নামা আছে। লিগ যদি শেষ না হয়, তাহলে এটা নির্ধারণ করবেন কীভাবে?
কুশল: এটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব লিগ কমিটির। ওরা নিশ্চয়ই এই বিষয়টা আলোচনা করবে। প্রয়োজনে ক্লাবগুলোকেও ডাকা হবে। সবাই মিলে বসে নয়, পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর তাও যদি সম্ভব পর না হয়, তাহলে এই বছর নয়, ওঠা-নামা বন্ধ থাকবে।
প্রশ্ন: এএফসি যখন আপনাদের আর মোহনবাগানকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, চলতি আই লিগে মোহনবাগানই চ্যাম্পিয়ন, তখন তাদের হাতে ট্রফি তুলে দিয়ে যোগ্য সন্মান জানাচ্ছেন না কেন?
কুশল: অবশ্যই জনাব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ওদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে তারিখ বলা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: এতো নয় গেল আই লিগ। কিন্তু আইএসএল কবে শুরু হবে?
কুশল: এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এটা বলা মুশকিল। তাও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নয় অক্টোবর মাসে শুরু করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: ধরুন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল। ভাইরাসও নির্মূল হল। তাহলে কি জমজমাট করে কোটি টাকার ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরু করা সম্ভব?
কুশল: এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কোনও কিছু আগাম বলা সম্ভব নয়। যদি সব ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়, তখন দেখতে হবে দেশের সরকার কী ব্যবস্থা নেয়। এর তো একটা আফটার এফেক্ট আছে।
প্রশ্ন: মানে? বিদেশি ফুটবলারদের বাকি দেশের মতো আমাদের দেশেও প্রবেশ যদি কড়াকড়ি করে দেয়, সেই আশঙ্কা করছেন?
কুশল: হ্যাঁ, সেই রকম আর কি! আমাদের দেশে কিন্তু এখন আফ্রিকা মহাদেশের থেকে ইউরোপ মহাদেশের বেশি ফুটবলার খেলে। ভাইরাসের এফেক্ট কিন্তু বেশ ভালোই পড়েছে ইউরোপের কিছু দেশে। তবে দু-একটি জায়গায় ছাড়া। যেমন বেলারুশ, তাজিকিস্তানে এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি। ওখানে তো দিব্যি লিগের ম্যাচ চলছে।
প্রশ্ন: যদি কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক বিদেশি ফুটবলার প্রবেশ করতে না দেয়, তাহলে কি বিদেশি ছাড়া আইএসএল বা আই লিগ করা সম্ভব?
কুশল: পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে সব কিছু। যদিও এই মুহূর্তে এই নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। তাও বলছি, অসম্ভব বলে কিছু হয় না। এই তো শুনছিলাম, পরিস্থিতি কঠিন হলে নাকি বিদেশি ছাড়াই আইপিএল করতে চায় বিসিসিআই। আসলে আর কিছু নয়, বিদেশি ছাড়া কোনও লিগ করলে, তার আকর্ষণ, জৌলুস কমে যায়।
প্রশ্ন: আচ্ছা, ইস্টবেঙ্গল কি আগামী মরশুমে আইএসএল খেলবে?
কুশল: ওটা তো ইস্টবেঙ্গল বলতে পারবে। কারণ আইএসএল খেলা তো ওদের উপর নির্ভর করছে। আমাদের উপর নয়।
প্রশ্ন: আপনার কী মনে হচ্ছে?
কুশল: আমার মনে হওয়ার ব্যাপার নেই। শুনছিলাম, ওরা চেষ্টা করছে। ব্যাস, এই অবধি জানি।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গল খেললে, কবের মধ্যে বিড পেপার তুলতে হবে?
কুশল: ওই রকম কোনও ব্যাপার নয়। ওরা যদি বলে খেলব, তাহলে ওদের আগে এফএসডিএলের সব শর্ত পূরণ করে, নিশ্চিত করতে হবে। তখন বিড পেপার ওপেন করা হবে।
প্রশ্ন: তার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই?
কুশল: ওই রকম ভাবে নেই। তবে তার জন্য আবার অনন্তকালও অপেক্ষা করা যাবে না। একটা সময়সীমা তো রাখতেই হয়।
প্রশ্ন: এটা ঠিক বোঝা গেল না। ইস্টবেঙ্গল খেললেই বিড পেপার ওপেন হবে। নচেৎ নয়?
কুশল: ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটা রোড ম্যাপ করে দিয়েছে এএফসি। সেই রোড ম্যাপে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া আছে। ভারতের প্রথম সারির লিগে খেলতে গেলে কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে। সেই মতই আমরা অনুসরণ করে চলেছি। ওরা যেমন বলেছে, আই লিগের দুটো দল নিতে। মোহনবাগান ইতিমধ্যেই এটিকের সঙ্গে মার্জ হয়ে গেছে। আর ইস্টবেঙ্গল চেষ্টা করছে। সেই কারণেই ইস্টবেঙ্গলের জন্য বিড পেপার ওপেন করার কথা বলা হয়েছে। আসলে, প্রথম সারির লিগে খেলব বললেই তো হয় না। এএফসির শর্ত অনুযায়ী পরিকাঠামো, স্টেডিয়াম, অর্থ থাকাও প্রয়োজন।
প্রশ্ন: এএফসির শর্ত অনুযায়ী কি তাহলে বিদেশি সংখ্যা কমিয়ে ৩+১ করবেন?
কুশল: দেশের ফুটবলের উন্নতির কথা ভেবে, আমরা অবশ্যই এএফসির নির্দেশ পালন করব। তবে এখনই নয়। সব স্টেক হোল্ডারদের আগে ডাকব। তাদের সঙ্গে বসে কথা বলব। তারপর আসতে আসতে সিদ্ধান্ত নেব। তবে অনেক জায়গায় আবার ক্লাব স্তরে ৩+১-এর বেশি বিদেশি নিয়ে খেলে। যেমন জাপান, কাতার। কিন্তু ওরা যখন এএফসির কোনও টুর্নামেন্ট খেলে তখন কিন্তু চার বিদেশিতেই খেলে। ওরা অবশ্য বেশ উন্নত। কিন্তু ওদের দেখলে তো আমাদের চলবে না। তাই আমরা ভারতীয় ফুটবলের জন্য ভবিষ্যতে চার বিদেশিতেই চলে যাব।
প্রশ্ন: এশিয়ান কাপের জন্য নাকি ভারত বিড করছে। এটা কি সত্যি?
কুশল: হ্যাঁ, সত্যি। তবে এটাকে বিড বলে না। এটাকে বলে এক্সপ্রেস ইন্টারেস্ট। তুমি করতে রাজি আছো কিনা আগেও জানাও। তার পর বিড পেপার তোলা যাবে। তা আমরা আর সৌদি আরব- দুজনেই জানিয়েছি প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে রাজি আছি। এবার যখন আলাদা করে বিডিং হবে তখন দেখা যাবে।